২০ তম বর্ষে পর্দাপন উপলক্ষে ভাসানী বিশ্ববিদ্যাল সাড়ে তিনশ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প

0

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিঃ বর্তমান বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার প্রসার ও বাংলাদেশের ‘রূপকল্প ২০২১’ এবং ‘সমৃদ্ধ বাংলাদেশ ২০৪১’ বাস্তবায়নের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩শ ৪৫ কোটি ৭৭ লক্ষ টাকার উন্নয়ন কর্মকান্ড দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বিশ্ববিদ্যালয়টি উন্নয়নের দিক থেকে কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণ করবে।

১৯৯৯ সালের ১২ অক্টোবর তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নামে এ বিশ^বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির বয়স দেড়যুগ পার হলেও অবকাঠামোগত উন্নয়নের চিত্র ছিল হতাশাজনক । বর্তমান সরকারের সময়ে এর উন্নয়ন চিত্র চোখে পড়ার মতো ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য সমাপ্ত ও চলমান প্রকল্পের আওতায় ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সেবা কার্যক্রম, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক, প্রশাসনিকসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যথেষ্ট নয় বলে প্রফেসর ড. মোঃ আলাউদ্দিন ২০১৩ সনের ৩ মে প্রথম মেয়াদে ভাইস-চ্যান্সেলর হিসেবে যোগদানের পর বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যদের সাথে আলোচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক, প্রশাসনিক ও অবকাঠামোগত নানাবিধ সমস্যা চিহ্নিত করেন।

চিহ্নিত সমস্যাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমাধানকল্পে তিনি প্রথমে মহামান্য রাষ্ট্রপ্রতি ও চ্যান্সেলর মোঃ আব্দুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান সমস্যাগুলোর লিখিত প্রতিবেদন রাষ্ট্রপ্রতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।

মহামান্য রাষ্ট্রপ্রতি ও প্রধানমন্ত্রী প্রতিষ্ঠানের চিত্র দেখে তাঁদের আন্তরিক সহযোগিতার কথা জানান এবং পর্যায়ক্রমে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের ব্যাপারে আশ্বাস প্রদান করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ভাইস-চ্যান্সেলর প্রচেষ্টায় মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষা, প্রশাসন ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন ২০১৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত মাস্টার প্ল্যাণ অনুযায়ী ”মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় শক্তিশালীকরণ”-শীর্ষক প্রকল্পটি মোট তিনশত পঁয়তাল্লিশ কোটি সাতাত্তর লক্ষ টাকা ব্যয়ে জুলাই ২০১৬ হতে জুন ২০১৯ মেয়াদে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় ২৫ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে অনুমোদন লাভ করে।

পরবর্তীতে সংশোধিত ডিপিপি’র আলোকে বর্ণিত প্রকল্পের মেয়াদ আরও ০২ বছর বৃদ্ধি পেয়ে জুলাই ২০১৬ হতে জুন ২০২১ পর্যন্ত অনুমোদিত হয়। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসুচি (এডিপি) বাস্তবায়নের আলোকে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে এ প্রকল্পে ৩৬ কোটি ৯২ লক্ষ টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ১৫ কোটি ৩০ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা এবং ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে ৫২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা অবমুক্ত ও ব্যয় হয়েছে। বর্ণিত প্রকল্পে ভৌত অবকাঠামোগত সকল কম্পোনেন্টের ই-জিপি তে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে ও কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আরডিপিপি অনুযায়ী ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ১২৫ কোটি মাত্রা রয়েছে।

অনুমোদিত প্রকল্পটির আওতায় বাস্তবায়নাধীন ১২.৭৪ একর ভূমি অধিগ্রহণ, ভূমি উন্নয়ন, ১২-তলা বিশিষ্ট একাডেমিক-কাম-রিসার্চ ভবন নির্মাণ, ১০-তলা বিশিষ্ট প্রশাসনিক অ্যানেক্স উত্তর ভবন নির্মাণ, ২৫০ ছাত্রের জন্য নির্মাণাধীন ৩য় ছাত্র হলের অবশিষ্ঠ ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম তলার উর্দ্ধমূখী সম্প্রসারণ, ৩৫০ ছাত্রীর জন্য ১০ তলা বিশিষ্ট ”শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল” নির্মাণ, ৪৫০ ছাত্রের জন্য ১০-তলা ভিতে ০৫ তলা পর্যন্ত ”শেখ রাসেল হল” নির্মাণ, ১০-তলা ভিতে ০৫ তলা পর্যন্ত মাল্টিপারপাস ভবন নির্মাণ, সিনিয়র শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য ১০ তলা ভিতে ০৫ তলা পর্যন্ত আবাসিক ভবন নির্মাণ।
এছাড়া বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের লক্ষ্যে পানি বিশুদ্ধকরণ প্লান্ট স্থাপন, মাটি ভরাটসহ অভ্যন্তরীণ আরসিসি রাস্তা নির্মাণ কালভার্ট নির্মাণ, আরসিসি ড্রেইন এবং ঢাকনাযুক্ত ডাষ্টবিন নির্মাণ, নতুন স্থাপনাসমূহে গ্যাস লাইন সংযোগ, প্রস্তাবিত ভবনসমূহের জন্য আসবাবপত্র ক্রয়, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ও ল্যাব যন্ত্রপাতি, কেমিক্যালস ও গ্লাসওয়ার ক্রয়, মেডিকেল যন্ত্রপাতি ক্রয়, ক্রীড়া সামগ্রী ক্রয়, অফিস যন্ত্রপাতি ক্রয়, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের জন্য বই ও সাময়িকি ক্রয়, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ০২ টি বাস, শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য ০১টি মিনিবাস ও ০১টি মাইক্রোবাস ক্রয় কার্যক্রমসমূহের বাস্তবায়ন কাজ বর্তমানে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। আশা করা যাচ্ছে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন কাজ সমাপ্ত হলে শিক্ষা, প্রশাসন এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। অবকাঠামোগত উন্নয়নের কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা নতুন ও উন্নত শিক্ষার পরিবেশ পাবে যা দক্ষ মানব সম্পদ গঠনে সহায়ক হবে।

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ আলাউদ্দিন বলেন, ”মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় শক্তিশালীকরণ”-শীর্ষক প্রকল্পে জুন ২০১৯ পর্যন্ত ৩০ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছে। চলতি ২০১৯-২০ অর্থ বছরে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় হলে মোট প্রকল্পের ৬১ শতাংশ ব্যয় হবে। এ প্রকল্পের ডিপিপি-তে অর্ন্তভুক্ত সবগুলো কম্পোনেন্টের নির্মাণকাজ ও প্রকিউমেন্টের কাজ সমাপ্ত হলে এ বিশ্ববিদ্যালয় অবকাঠামোগত উন্নয়নে শিক্ষা, গবেষণা, প্রশাসন, ল্যাবরেটরী, সুবিধা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যসেবা, খেলাধূলা, পরিবহন সেবা ও আবাসনসহ ইত্যাদি বিষয়ে ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি হবে। যার ফলে আরও নতুন একাডেমিক বিভাগ খোলা সম্ভব হবে ও বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের কলেবর বৃদ্ধি পাবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় গুনগতমান আরও বৃদ্ধি পাবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.