দীর্ঘ ৩৪ বছরেও যাতায়াতের রাস্তা মেলেনি গোপিনাথপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের

ছাত্র-ছাত্রীদের ভোগান্তি চরমে

0

টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার গয়হাটা ইউনিয়নের গোপিনাথপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার ৩৪ বছর পরও ছাত্র-ছাত্রীদের বিদ্যালয়ে যাতায়াতের কোন রাস্তা নেই। ১৯৮৫ সালে ৩৫ শতাংশ জায়গার উপর বিদ্যালয়টি স্থাপন করা হয়। জাতীয়করন করা হয় ২০১৩ সালে। বিদ্যালয়টির সামনের(দক্ষিন-পূর্ব) দিকে রয়েছে ফসলের ক্ষেত ও পুকুর। উত্তর-পশ্চিম দিকে কবরস্থান ও আকাশমনি গাছের বাগান।পূর্ব দিকে পুকুর ও বসত-ভিটে ।আর পিছন দিকে রয়েছে বসত-ভিটে।বিদ্যালয়ে যাতায়াতের কোন রাস্তা রাখা হয়নি প্রতিষ্ঠার পর থেকে। ফলে দীর্ঘ ৩৪ বছর ধরে এই বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী সহ শিক্ষকদের বিভিন্ন জনের বসত-বাড়ীর উপর দিয়ে, ফসলের ক্ষেত পার হয়ে বিদ্যালয়ে আসতে হয়। অনেক সময় কবর স্থানের উপর দিয়েও বিদ্যালয়ে আসতে হয়।

বর্ষা কালে অবস্থা আরো শোচনীয় হয়ে দাড়ায়। বিদ্যালয় প্রাঙ্গন নিচু হওয়াতে বর্ষার পানি বিদ্যালয়ের সামনের মাঠে এসে উপচে পড়ে । বর্ষা কালে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করতে হয়। এ সময় ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি কমে যায়।যাতায়াতের রাস্তা না থাকায় উন্নয়ন থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে ৩৪ বছরের পুরনো এই বিদ্যালয়টি। বিদ্যালয়ের একটি মাত্র ভবনে তিনটি শ্রেনী কক্ষে ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস নেওয়া হয়। আর একটি ছোট্র কক্ষে প্রধান শিক্ষক সহ অন্যন্য শিক্ষকদের বসার স্থান। প্রধান শিক্ষকের কক্ষে ফ্যানের ব্যবস্থা থাকলেও, ছাত্র-ছাত্রীদের শ্রেনী কক্ষে নেই কোন ফ্যানের ব্যবস্থা । এই প্রচন্ড গরমে ফ্যান ছাড়াই ক্লাস করতে হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের ।

বিদ্যালয় কতৃপক্ষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি বিদ্যালয়ের একটি নতুন ভবন তেরির জন্য টেন্ডার হয়েছে। তিন তলা ফাউন্ডেশনের একতলা ভবনের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৫৬ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। কাজটি পেয়েছে মাষ্টার এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বিদ্যালয়ে যাতায়াতের রাস্তা না থাকায় মালামাল নিতে না পারায় কাজটি করার অনুমোদি পত্র পাওয়ার পরও নিদিষ্ট সময়ে কাজ শুরু করতে পারেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি। ফলে কাজটি বাতিল হওয়ার উপক্রম হয়। বাধ্য হয়ে এলাকাবাসী, স্থানীয় কবরস্থানের উপর দিয়ে সাময়িক একটি রাস্তা করে দিলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজটি শুরু করতে সমর্থ হয়। কিন্তু রাস্তা সংক্রান্ত জটিলতা এখনো কাটেনি বলে জানা গেছে।
গোপিনাথপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেনীর ছাত্র মোঃ ফয়সাল বলেন, রাস্তা না থাকার আমাদের বিভিন্ন জনের বাসার ভিতর দিয়ে আসতে হয়। মাঝে মাঝে বাসার গেট বন্ধ থাকলে,কবরস্থানের উপর দিয়ে আসতে হয়। বর্ষা কালে আমাদের যাতাযাতে সবচেয়ে সমস্যা হয়। অনেক সময় পানির কারনে স্কুলে আসি না। আসতে ইচ্ছে করে না।

পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্রী লিমা আক্তার জানায়, আমাদের বিদ্যালয়ে আসতে ভীষন সমস্যা হয়। অনেক সময় অন্যের বাড়ীর উপর দিয়ে আসতে গেলে বকা ঝকা শুনতে হয়। তখন বিদ্যালয়ে আসতে ইচ্ছে করে না।কবর স্থানের পাশ দিয়ে আসতে ভয় করে। সরকারের কাছে দাবী, আমাদের বিদ্যালয়ে আসার একটা রাস্তা করে দেওয়া হোক।

গোপিনাথপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুল হাকিম বলেন, ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াতের রাস্তা না থাকায় সমস্যা হচ্ছে। অনেক ছাত্র-ছাত্রী পাশ্ববর্তী একটি প্রাইমারী স্কুলে চলে যাচ্ছে। এই বিদ্যালয়ে যাতায়াতের জন্য রাস্তা বের করার অনেক চেষ্ঠা করেছি। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সাথে বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকবার আলোচনা করেছি । তিনি একবার এসে বিদ্যালয়ের রাস্তা ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেটি অজ্ঞাত কারনে বাস্তবায়িত হয়নি। বর্ষা কালে ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াতে ভীষন সমস্যা হয়। আমাদের বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার জন্য একটি রাস্তা নির্মানের জন্য যথাযথ কতৃপক্ষের কাছে আবেদন জানাচ্ছি।

গয়হাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান আসকর এ প্রসঙ্গে বলেন, বিষয়টি সর্ম্পকে অবগত আছি। আমি বেশ কয়েকবার চেষ্ঠা করেছি বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াতের সড়ক নির্মান করে দেওয়ার জন্য। কিন্তু স্থানীয় দু’গোষ্ঠির দ্বন্ধের জন্য কোন সিদ্ধান্তে আসা যায়নি।দীর্ঘ ৩৪ বছরে যে সমস্যার সমাধান হয়নি, এটা এতো সহজে সমাধান হবে বলে মনে হয় না ।তবে চেষ্ঠা করবো যত দ্রুত সম্ভব ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়ের জন্য রাস্তা নির্মান করে দেবার।

এ প্রসঙ্গে নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফয়েজুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি সর্ম্পকে আমার জানা ছিল না। আপনার মাধ্যমে বিষয়টি জানলাম। যত দ্রুত সম্ভব স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করা হবে।
প্রতিবেদকঃ মোঃ আরমান কবীর সৈকত

২৬.০৮.২০১৯

Leave A Reply

Your email address will not be published.