টাঙ্গাইল শহরে রাতে বিভিন্ন স্থানে বিষ্ফোরণ, জনমনে আতঙ্ক

0

স্টাফ রিপের্টার:টাঙ্গাইল শহরের বিভিন্ন স্থানে বুধবার(১৭এপ্রিল) রাতে অন্তত ৬টি বিষ্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। রাত ৯টা ২৭ মিনিটে শহরের পৌর ভবনের সামনে দুটি, শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানের পূর্ব পাশের কোনায় একটি, শিবনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে একটি ও টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় ঈদগাহ্ ময়দানে দুটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

বিকট শব্দে দফায় দফায় বিষ্ফোরণের পর সাধারণ মানুষ দিদ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করে। এসময় নিরালা মোড়সহ শহর ফাঁকা হয়ে যায়। মানুষের মধ্যে তৈরি
হয় আতঙ্ক। পরে পুলিশের একটি দল পৌর ভবনের সামনে থেকে অবিষ্ফোরিত তিনটি তাজা বিষ্ফোরক উদ্ধার করে।

বৃহস্পতিবার শহরের শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে আওয়ামী লীগের দুইপক্ষের একই সময়ে দুটি সমাবেশ আহবান করা হয়েছে বলে জানাযায়। সেই ঘটনার প্রেক্ষিতে আতঙ্ক তৈরি করার লক্ষ্যে একটি পক্ষ এমন ঘটনা ঘটাতে পারে বলে অনেকে ধারণা করছেন।

এই ঘটনার পর বৃহস্পতিবার(১৮ এপ্রিল) সকালের আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের ডাকা রাজনৈতিক মিছিল ও সমাবেশ বাতিল করা হয়েছে বলেন জানান টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার।
বিষ্ফোরণের ঘটনার পর শহরে পুলিশ ও বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া টাঙ্গাইল শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত
পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান,গতকাল রাত সাড়ে নয়টার দিকে দুটি মোটরসাইকেলে চারজন হেলমেট পরিহিত আরোহী পৌর ভবনের সামনে এসে হঠাৎ দুটি বিষ্ফোরণ ঘটায়। এসময় তারা আরো তিনটি বিষ্ফোরক ছুড়লেও তা বিষ্ফোরিত হয়নি। পরে একটি মোটরসাইকেল বিন্দুবাসিনী বালক বিদ্যালয়ের পেছনের সড়ক দিয়ে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় ঈদগাহ’র দিকে চলে যায়। অপর মোটরসাইকেলটি ক্লাব রোড হয়ে পুরাতন বাসস্ট্যান্ডের দিকে চলে যায় এমন টাই জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।

তারা আরও জানায়,পরে পুলিশ এসে টাঙ্গাইল পৌর ভবনের সামনে থেকে তিনটি অবিষ্ফোরিত বিষ্ফোরক উদ্ধার করে এবং বিষ্ফোরণের আলামত সংগ্রহ করে।

এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল সদর থানার পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাকিব বলেন, কে বা কাহারা মোটরসাইকেল যোগে এসে পৌর ভবনের সামনে দুটি বিষ্ফোরণ ঘটিয়েছে। এছাড়া এখান থেকে তিনটি অবিষ্ফোরিত বিষ্ফোরক উদ্ধার করে নিষ্ক্রিয় করা জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, এগুলো ককটেল নাকি অন্য বিষ্ফোরক তা খতিয়ে দেখা হবে।

এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়ছার বলেন, আওয়ামী লীগের দুটি গ্রুপের বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল)সকালে আমার কাছে মিছিল করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করে। রাতে শহরের বিভিন্ন স্থানে বিষ্ফোরণ ঘটনার পর তাদের মিছিলের অনুমোদি বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। শহরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে
রাখতে পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে।এছাড়াও শহরের বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, যারা এই বিষ্ফোরণ ঘটনার সাথে জড়িত তাদের সনাক্ত করে গ্রেপ্তারের অভিযান শুরু হয়েছে।

উল্লেখ্য, টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষ ‘পৃথক দুটি ব্যানারে’ আজ (১৮এপ্রিল) বৃহস্পতিবার একই স্থানে একই সময়ে সমাবেশের আহ্বান করেছে। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে চলছে উত্তেজনা। এক পক্ষ টাঙ্গাইলের সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় শহরের শহীদ স্মৃতি উদ্যানে একটি সমাবেশ আহ্বান করেছেন। তার ধর্ষণ মামলার আসামি শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পদ থেকে সদ্য অব্যাহতি প্রাপ্ত গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনিকে গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করছে।

অপর পক্ষ জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের ব্যানারে একই দিন একই সময় শ্রমিক সমাবেশের আয়োজন করে। এর নেতৃত্বে রয়েছেন জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বালা মিয়া, ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনির ও ফেডারেশনের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান ওরফে
আমিন।

তানভীর হাসান টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসন থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগ থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত সহ-সভাপতি গোলাম কিবরিয়া তাঁর ভাই।

টাঙ্গাইলের সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারের নেতৃত্বে রয়েছেন টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম সিরাজুল হক, সদর উপজেলা
পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শাহজাহান আনছারী, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুজ্জামান সোহেল।

Leave A Reply

Your email address will not be published.