আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামসুল হকের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন

0

টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলে আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ভাষা সৈনিক শামসুল হকের
১০৩ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে। টাঙ্গাইলে ১ফেব্রুয়ারী সোমবার শামসুল হক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করা হয়।
টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার কদিম হামজানি এলাকায় আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ভাষা সৈনিক শামসুল হকের কবরে বেলা সাড়ে দশটায় পরিবার ও ভক্তঅনুরাগীদের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়। এরপূর্বে মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া করা হয়।
এরপর টাঙ্গাইল শহরের সাধারণ গ্রন্থাগার মিলনায়তনে শামসুল হকের জীবনাদর্শ নিয়ে আলোচনা সভা ও প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শিত হয়।
শামসুল হক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডা. সাইফুল ইসলাম স্বপন এর সভাপতিত্বে, সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী মোঃ রাশেদ খান মেনন (রাসেল) এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অতিথির বক্তব্য রাখেন সরকারি সা’দত কলেজের অধ্যক্ষ চর্যা গবেষক প্রফেসর আলীম মাহমুদ, সিপিবি টাঙ্গাইলের সভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক, সরকারি সা’দত কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আফছার আলী, টাঙ্গাইল ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি হারুন-অর-রশিদ, টাঙ্গাইল সাধারণ গ্রন্থাগারের সাধারণ সম্পাদক কবি মাহমুদ কামাল, টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোখলেছুর রহমান, শামসুল হক ফাউন্ডেশনের মহাসচিব আবুল কালাম মোস্তফা লাবু, শামসুল হক স্মৃতি পরিষদের সভাপতি কৃষক আব্দুল গফুর বেপারী, শামসুল হক পরিষদের সভাপতি মাসুম পারভেজ হক, আমিনুল হক শাহীন, মনিরুল ইসলাম মনির ‘সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

শামসুল হক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডা. সাইফুল ইসলাম স্বপন এর বিবৃতি অনুযায়ী জানা যায়, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও ভাষা আন্দোলনের শীর্ষ নেতার জন্ম টাঙ্গাইলের এলাসিন মাতুলালয়ে নিজ গ্রাম মাইঠান- টেউরিয়া। তিনি জাহ্নাবী হাইস্কুল থেকে ১৯৩৮ সালে ম্যাট্রিক এবং করটিয়া সাদ’ত কলেজ থেকে ১৯৪০ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে সেখান থেকে ১৯৪৩ সালে ইতিহাসে বিএ (অনার্স) ডিগ্রি লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এলএলবিতে ভর্তি হয়েছিলেন কিন্তু রাজনৈতিক কারনে তা সমাপ্ত করা সম্ভব হয়নি। তিনি ফজলুল হক মুসলিম হলের ছাত্র ছিলেন। ৪০ এর দশকে তিনি নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগ ও বঙ্গীয় মুসলিম লীগের ১৫০ মোগলটুলী পার্টি হাউজকেন্দ্রিক (ঢাকা) তরুন কর্মীদের নেতা ছিলেন । তিনি সেখানেই থাকতেন। সে সময় ঢাকার আহসান মঞ্জিল বা খাজা নেতৃত্বের বিপরীতে তারা সোহরাওয়ার্দী – আবুল হাশিম গ্রুপের সমর্থক ছিলেন। দেশ বিভাগ এর পূর্বে তার নেতৃত্বে ঢাকা জেলা মুসলিম লীগ খাজাদের নিয়ন্ত্রনমুক্ত হয়। ঢাকায় পাকিস্তান আন্দলনের তিনি প্রধান সংগঠক ছিলেন। রাজনীতিতে তিনি ছিলেন খুবই নিবেদিত ও আদর্শবান। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর তিনি ১৯৪৯ সালের এপ্রিল মাসে টাঙ্গাইলে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে মুসলিম লীগ প্রাথী ও করটিয়ার জমিদার পরিবারভুক্ত খুররম খান পন্নিকে পরাজিত করে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, ‘মওলানা ভাসানী’ প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও শেখ মুজিব প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। ‘মুল দাবি’ নামে আওয়ামী লীগের প্রথম ম্যানিফেস্টো তারই রচিত। ‘৪৮ ও ৫২’ -এর ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন এবং এ কারনে তাকে কারাবরণ করতে হয়। ১৯৪৯ ও ১৯৫২ সালে দু’দফায় তিনি অনেকদিন কারাগারে ছিলেন। কারাগারে থাকাকালে তার মস্তিষ্ক-বিকৃতি ঘটে। এরপর বেশ কয়েক বছর বেঁচে থাকলেও তিনি আর স্বাভাবিক হননি। ইডেন কলেজের ইংরেজি বিষয়ের অধ্যাপিকা আফিয়া খাতুন ছিলেন তার স্ত্রী । শামছুল হক যখন ৫২ -এর ভাষা আন্দোলনে জেলে যান, তখন তিনি তাকে ছেড়ে চলে যান। সংসার জীবনে শামছুল হকের ২ সন্তান রয়েছে। সন্তানদ্বয় -(১) উম্মেবতুল তাজমা তাহেরা (ড.শাহিন), (২)-উম্মেবতুল ফাতেমা জাহুরা (ড.শায়কা)। তারা বর্তমানে আমেরিকান নাগরিক। জ্যোতির্বিজ্ঞানী হিসেবে বর্তমানে NASA-য় কর্মরত। ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি হঠাৎ নিখোঁজ হন এবং দীর্ঘ ৪২ বছর ২০০৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত নিরুদ্দেশ থাকেন। ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে জানা যায় হক সাহেব ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দের ১১ সেপ্টেম্বর, শনিবার বাদযোহর, যোগারচরের বিখ্যাত কংগ্রেস নেতা মরহুম মৌ.মহির উদ্দিন আনছারীর বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন। মরহুম আনছারীর ছেলেরা পূর্ব পরিচিত অসুস্থ হক সাহেবকে বাড়ীতে রেখে সেবা যত্ন চিকিৎসা করান। ৭ দিন চিকিৎসার পর নেতার মৃত্যু হলে জিগাতলার হুজুর শামস উদ্দিন মওলানা কতৃক জানাজা শেষে নেতাকে কদিমহামজানি কবরস্থানে দাফন করা হয়। ৬ সেপ্টেম্বর ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে পাক-ভারত যুদ্ধ, দেশ টালমাটাল থাকায় উপর্যপরি আওয়ামী লিগের নেতার মৃত্যু কংগ্রেস নেতা মরহুম মহির উদ্দিন আনছারীর বাড়িতে হওয়ায় বিষয়টি গোপন রাখা হয়। ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে ‘দৈনিক ইত্তেফাক’ পত্রিকায় হক সাহেবের মৃত্যুর সংবাদ প্রকাশিত হয়। সাদ’ত কলেজ করটিয়া ,শামছুল হকের নিজ বাড়ি, ঢাকায় আবুল হাশিমের নিজ বাড়িতে শোক সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে নেতার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয়। তিন দিন পর শামছুল হককে টাঙ্গাইলের মাদ্রাসা রোডে হাটতে দেখা যায়। ইত্তেফাক কাগজটি পড়ে শামছুল হক ইত্তেফাক অফিসে গিয়ে তীব্র প্রতিবাদ ব্যক্ত করেন। পরের দিন ইত্তেফাক আনন্দ প্রকাশ করে শামছুল হকের সুস্থতা এবং দীর্ঘায়ু কামনা করে বিবৃতি প্রকাশ করে। এসব কারনেই ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দের সঠিক মৃত্যুর সংবাদ শুনেও নেতার পরিবার সংবাদটি বিশ্বাস করতে পারেনি। ফলে মৃত্যুর সংবাদটি ৪২ বছর পর্যন্ত অগোচরেই রয়ে যায়। তার বিখ্যাত বই আজও রাজনীতিকদের মনে দাগ কেটে আছে – সেটি হোল ‘বৈপ্লবিক দৃষ্টিতে ইসলাম’ দার্শনিক আবুল হাশিম, হযরত আল্লামা আজাদ সোবহানী ও টাঙ্গাইলের এডভোকেট আব্দুল করিম খান সাহেব বইটি লিখতে অনুপ্রেরণা যুগীয়েছিলে

Leave A Reply

Your email address will not be published.