আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা যা বললেন করোনাভাইরাস নিয়ে

0

নিউজ ডেস্কঃ :প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত চীনের মূল ভূখণ্ড ও এর বাইরে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮০৩ জনে। যা সার্সের ভয়াবহতাকেও ছাড়িয়েছে।

চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে ছড়ানো এ ভাইরাসের নতুন নামকরণ করা হয়েছে ‘নোবেল করোনাভাইরাস নিউমোনিয়া’। বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেল নিউজ টোয়েন্টিফোরের স্বাস্থ্য বিষয়ক অনুষ্ঠান স্বাস্থ্য সংলাপে এ ভাইরাস নিয়ে কথা বলেছেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর।

নতুন এ করোনাভাইরাসের উৎস সম্পর্কে আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর বলেন, এর উৎস নিয়ে নানাবিধ কথা প্রচলিত আছে। উহানে সামুদ্রিক খাবার বিক্রি হয় এমন বাজারে যারা গিয়েছিলেন তাদের মধ্যে বেশি সংক্রমিত হয়েছিল এ ভাইরাস। তখন থেকে আমরা জানি যে যেকোনো ধরনের বন্যপ্রাণী থেকে এটা হতে পারে, কারণ সেই বাজারে শুধু সামুদ্রিক খাবার বিক্রি হয় না, নানা ধরনের বন্য প্রাণীও বিক্রি হয়। কেউ কেউ প্রথমে সাপের কথা বলছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা জিনোম বিশ্লেষণ করে দেখেছি বাদুড়ে যে ধরনের করোনাভাইরাস পাওয়া যায় সেটার সাথে ৯৬.৫% নতুন এ ভাইরাসের সাথে মিল রয়েছে। এছাড়া নির্দিষ্ট কোনো উৎস এখনো পাওয়া যায়নি। এ ভাইরাস কোনোভাবে মানুষে সংক্রমিত হওয়ার পর তা মানুষ থেকে মানুষ সংক্রমিত হয়ে যাচ্ছে। সে জন্যই এ ভাইরাস বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।

তিনি বলেন, ভাইরাসটিকে বলা হচ্ছে নোবেল করোনাভাইরাস, এখানে ‘নোবেল’ শব্দের অর্থ হচ্ছে নতুন। করোনাভাইরাস আগে থেকেই আমাদের মধ্যে ছিল। তবে করোনাভাইরাস গোত্রের যে ভাইরাসটি এখন ছড়িয়েছে তা আগে দেখা যায়নি। গত বছরের ৮ ডিসেম্বর থেকে ১/২ করে এরকম রোগী পাওয়া যাচ্ছিল। চীন প্রথমে ভেবেছিল সার্স কিংবা মার্সের মতো কিছু। কিন্তু পরে রোগীর সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ার পরও যখন ভাইরাসটি শনাক্ত করা যাচ্ছিল না তখন চীন নিয়ম অনুযায়ী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে জানায়। জানুয়ারির ৮ তারিখে এসে আমরা জানলাম এটা সম্পূর্ণ নতুন করোনাভাইরাস। এর আগে কখনো এটা মানুষকে সংক্রমণ করেনি।

করোনাভাইরাসের লক্ষণ সম্পর্কে স্বাস্থ্য সংলাপ অনুষ্ঠানের অতিথি হয়ে আসা ঢাকা শিশু হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. রিয়াজ মোবারক বলেন, করোনাভাইরাসের লক্ষণ সাধারণ জ্বরের মতোই। একটু গলায় ব্যথা, তারপর জ্বর, সর্দি, কাশি। প্রথম দিকে বড় কোনো লক্ষণ প্রকাশিত হয় না। শিশু ও বুড়োরা সাধারণত যে কোনো ভাইরাসে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকেন। তাদের মধ্যে এ ভাইরাসে আক্রান্তের হার বেশি। আবার যারা সম্প্রতি চীন থেকে এসেছেন বা চীন ফেরত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে গিয়েছেন তাদেরও করোনায় আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা বেশি।

করোনাভাইরাস আতঙ্কে বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাংলাদেশের মানুষের মধ্যেও মাস্ক ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে। এ বিষয়ে আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশে এখনো করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়নি। করোনাভাইরাস আতঙ্কে মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই। ধূলাবালি ও অন্য কারণে মাস্ক পরতেই পারেন। করোনাভাইরাসের ভয়ে রাস্তায় মাস্ক পরে ঘুরার দরকার নেই।

নতুন বের হওয়া মাস্ক এন৯৫ এর ব্যবহারের বিষয়ে তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে যিনি চিকিৎসা দেবেন এবং নমুনা সংগ্রহ করবেন তারা শুধু এই মাস্ক পরবেন। এটা সবাই পরতে জানে না। প্রশিক্ষণ না থাকলে যে এ মাস্ক পরবে সে ভুল করবে এবং ইনফেকশনের ঝুঁকিতে থাকবে। এটা ভুল করে পরলে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকবে। মেডিকেল কর্মী না হলে এবং রোগীদেরও এটা একদমই পরার দরকার নেই। যারা শ্বাসপ্রশ্বাসের রোগী তারা এটা পরলে তাদের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।

না জেনে মাস্ক ব্যবহারের বিষয়ে সতর্ক করেছেন আইইডিসিআর প্রধান এ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা । তিনি বলেন, মাস্ক ব্যবহারে কিছু নিয়মকানুন আছে। আইইডিসিআর, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে নির্দেশনা আছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেসব নিয়মকানুনের কথা আমরা জানতে পারছি তার বেশিরভাগই ভুল। মাস্ক পরতে হলেও নিয়ম জানতে হবে। সবধরনের মাস্কই যে কোনো পরিস্থিতিতে পরা যাবে বিষয়টি তা নয়। আর রোগী যদি মাস্ক পরে থাকে তাহলে অন্যদের মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই। রোগীকে পরামর্শ দেব, ‘আপনি মাস্ক পরবেন’। তবে বাংলাদেশে যেহেতু কোনো রোগী এখনো পাওয়া যায়নি তাই করোনাভাইরাসের ভয়ে রাস্তায় মাস্ক পরে ঘুরে বেড়ানো একদমই অপ্রয়োজনীয়।

আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সতর্ক করে বলেন, মানবজাতি যখন এ ধরনের সঙ্কটে পড়ে তখন অনেক ধরনের গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এজন্য সংবাদের নির্ভরযোগ্য উৎস দেখে, সংবাদের মূল্য বুঝে পড়বেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, আইইডিসিআরসহ বেশ কয়েকটি দায়িত্বশীল ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য পাওয়া যাবে। প্রয়োজনে সেসব দেখার পরামর্শ দেন তিনি।

Leave A Reply

Your email address will not be published.