টাঙ্গাইলের বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান খান ফারুক একুশে পদক পাচ্ছেন

0

মোঃ মশিউর রহমান/টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধিঃ
মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য টাঙ্গাইলের বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান খান ফারুক এবার একুশে পদক পাচ্ছেন। একুশে পদক সংক্রান্ত সাব-কমিটির এক সভায় ২২০ জনের মধ্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মোট ৪৫ জনের নাম প্রাথমিকভাবে মনোনীত করা হয়। জাতীয় পুরস্কার সংক্রান্ত বাছাই-যাচাই মন্ত্রিসভা কমিটি অবশেষে ২১ জনের নাম সুপারিশ করে। এই সুপারিশ প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হলে বৃহস্পতিবার অনুমোদন দেয়া হয়।

ফজলুর রহমান খান ফারুক মির্জাপুর উপজেলার ওয়ার্শি গ্রামে ১৯৪৪ সালের ১২ অক্টোবর জন্মগ্রহণ। তার বাবার নাম আব্দুল হালিম খান ও মাতার নাম ইয়াকুতুন্নেছা।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের গণহত্যা ও ক্র্যাক ডাউনের পর টাঙ্গাইলে স্বাধীনতার পক্ষের সব দলের প্রতিনিধি নিয়ে গণমুক্তি পরিষদ গঠিত হয়। এ পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা বদিউজ্জামান খান এবং কালিহাতী থেকে নির্বাচিত প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী ছিলেন আহ্বায়ক। ফজলুর রহমান খান ফারুক এর সদস্য ছিলেন।

১৯৭১ সালের ৩ এপ্রিল পাকবাহিনী মির্জাপুরে প্রবেশ করবে বলে খবর পেয়ে গোড়ান-সাটিয়াচড়ার পূর্বদিকে খালি মাঠে দুটি পরিখা খনন করা হয়। ফজরের নামাজ শেষে একটি পরিখায় গিয়ে অবস্থান নেন ফজলুর রহমান খান। ভোরের আধো-আলোতে পাক হানাদার বাহিনীর বিরাট কনভয় সড়ক দিয়ে মির্জাপুরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। পাকিস্তানিদের কনভয়টি গোড়ান-সাটিয়াচড়ায় পরিখার কাছে আসার পর তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধের এক পর্যায় সুবেদার আব্দুল আজিজ ফজলুর রহমান ফারুককে অনুরোধ করে বলেন, ‘আপনি জনপ্রতিনিধি, ভবিষ্যতে আপনাদের প্রয়োজন আছে, আপনি যত দ্রুত সম্ভব এখান থেকে সরে যান।’ তার অনুরোধে ফজলুর রহমান খান কিছুটা পেছনে সরে চলে আসেন। বেলা পৌনে দুইটার দিকে পাকিস্তানিরা সফল হয়। ফজলুর রহমান খান ফারুক চলে আসার কিছুক্ষণ পরই পাকিস্তানি বাহিনীর মেশিনগানের গুলিতে ওই সুবেদারের বুক ঝাঁজরা হয়ে যায়। অল্পের জন্য সেদিন বেঁচে যান ফজলুর রহমান খান ফারুক।

তিনিই প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধে টাঙ্গাইলের একমাত্র প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য, যিনি বাঙ্কারে ইপিআর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে অবস্থান নিয়ে অসীম সাহসের পরিচয় দিয়েছিলেন।

প্রতিরোধ যুদ্ধ শেষে ১৮ এপ্রিল শেরপুর সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ঢালু সীমান্ত দিয়ে ভারতে ঢুকে পড়েন। পরবর্তীতে ১১ নং সেক্টরের তুরা মুক্তিবাহিনী ট্রেনিং সেন্টারে পলিটিক্যাল মটিভেটরের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি নিজেও ভারতে অস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতাদের একজন ছিলেন।

টাঙ্গাইলের আওয়ামী লীগের রাজনীতি তার রয়েছে অসামান্য ভূমিকা। বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। পাশাপাশি ক্রীড়া,শিল্প-সাহিত্য-
সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক ও সংস্কৃতি উৎকর্ষ সাধনে কাজ করে যাচ্ছেন।

বিন্দুবাসিনী হাই স্কুল থেকে মেট্রিক পাস করেন। স্কুলে পড়া অবস্থায় তিনি জড়িয়ে পড়েন বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে। ক্রীড়াক্ষেত্রেও ঝোঁক বেড়ে যায় অনেক। শৈশবে তবলা চর্চাও করেছেন। মেট্রিক পাস করার পর তিনি ভর্তি হন ঢাকার জগন্নাথ কলেজে। সেখানকার হোস্টেলেই থাকতেন তিনি। সেখান থেকে চলে এসে ভর্তি হন করটিয়া সা’দত কলেজে।

সাংবাদিকতায় যুক্ত ছিলেন। টাঙ্গাইল মহকুমা প্রতিনিধি হিসাবে দৈনিক ইত্তেফাকে সাংবাদিকতা
করেছেন। এখন তিনি দৈনিক আজকের দেশবাসী পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক।

তিনি ক্রীড়ানুরাগী ও সফল ক্রীড়া সংগঠক। ওয়াইএমএস ক্লাকের হয়ে এক সময় শহর মাতিয়েছেন। টাঙ্গাইলের ফুটবলকে জাগিয়ে তুলতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন ।জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য ছিলেন দীর্ঘ ২৫ বছর। ক্রীড়া সংস্থার ক্রিকেট উপ-পরিষদের চেয়ারম্যানও ছিলেন ২৫ বছর। ক্রিকেট থেকে ২০০৮ সালে তিনি চলে আসেন ফুটবল এসোসিয়েশনে। এখানে সভাপতি হিসেবে যোগ দিয়ে এখন পর্যন্ত এই দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করছেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.