নিউজ ডেস্কঃ বরগুনায় প্রকাশ্যে সড়কে স্ত্রীর সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত মোট ১৩ জনকে শনাক্ত করার কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। আসামিদের কেউ যাতে দেশ ত্যাগ করতে না পারে, সে জন্য দেশের সব বিমানবন্দর, স্থলবন্দর ও নৌবন্দরে জারি করা হয়েছে রেড অ্যালার্ট।
এ ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত মামলার এজাহারভুক্ত দুই আসামিসহ মোট তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে ধরা পড়েনি মূল খুনি সাব্বির আহমেদ নয়ন, রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজী। বরগুনার পুলিশ বলছে, মাদকের কারণে নয়, ব্যক্তিগত কারণে রিফাত শরীফকে হত্যা করা হয়েছে। অচিরেই মূল আসামিদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।হত্যাকাণ্ডে জড়িত ১৩ জন শনাক্ত : গতকাল ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে এক অনুষ্ঠানের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত আছে—এ রকম ১৩ জনকে আমরা শনাক্ত করেছি। এ পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’ ’
রেড অ্যালার্ট জারি : রিফাত হত্যার আসামিরা যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে, সে জন্য আগের দিনই সীমান্তে সতর্কতা জারির নির্দেশ
দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। গতকাল সকালে পুলিশ সদর দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আসামিরা যেন দেশ ত্যাগ করতে না পারে, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট সব বিমানবন্দর, স্থলবন্দর ও নৌবন্দরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’গতকাল পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) সোহেল রানা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘বরগুনা জেলা পুলিশের পাশাপাশি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম ইউনিট আসামিদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে কাজ করছে। আশা করছি, সব আসামিকে শিগগিরই আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।’
আসামিদের বিষয়ে কারো কাছে কোনো তথ্য থাকলে তা পুলিশকে জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে।
মাদক নয়, ব্যক্তিগত কারণে রিফাত খুন : এখন পর্যন্ত এজাহারভুক্ত দুজন এবং ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে আরেকজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানানো হয়। প্রেস ব্রিফ করেন পুলিশের বরিশাল রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. শফিকুল ইসলাম ও বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন।
ডিআইজি শফিকুল ইসলাম বলেন, একজন হত্যাকারীও পার পাবে না। শুধু বরগুনায় নয় কিংবা বড় বড় শহর নয়, গ্রামে-গঞ্জে, পুরো বাংলাদেশে আসামিদের জন্য রেড অ্যালার্ট দেওয়া হয়েছে। আশা করি খুব শিগগির আমরা সব আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হব।’
পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলেন, মাদকের কারণে নয়, ব্যক্তিগত কারণে রিফাত শরীফকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি জানান, এ হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ডের নামে মাদক, হামলা, ছিনতাই ও চুরির আটটি মামলা রয়েছে। রিফাত ফরাজীর নামেও চারটি মামলা রয়েছে বরগুনা থানায়।
পুলিশ সুপার বলেন, হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করতে বিভিন্ন স্তরে ফাঁদ পেতে আছে পুলিশ। দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের ধরা পড়তেই হবে।
এসব মামলার পরও তারা প্রকাশ্যে অপরাধ করে বেড়ানোর সাহস পায় কোথায়—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলেন, ‘প্রতিটি অপরাধের পরই তাদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কিন্তু আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে এলে তখন পুলিশের আর কিছু করার থাকে না।’গত বুধবার সকালে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। রিফাতকে প্রকাশ্যে কোপানোর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়। ওই দিন রাতেই রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ নয়ন, রিফাত ফরাজী এবং রিশান ফরাজীসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরো চার-পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেন। অন্য আসামিরা হলো চন্দন, মো. মুসা, মো. রাব্বি আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রায়হান, মো. হাসান, রিফাত, অলি ও হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়। তাদের মধ্যে চন্দন ও হাসান ছাড়া নাজমুল হাসান নামের আরেকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে বরিশাল লঞ্চঘাটে বরিশাল থেকে ঢাকাগামী এমভি মানামী লঞ্চ তল্লাশি করে সন্দেহভাজন হিসেবে চার যুবককে আটক করা হয়। তাদের একজনের সঙ্গে রিফাত হত্যাকাণ্ডের এক আসামির চেহারা মিল পাওয়া যায়। তবে বরিশালের পুলিশ বলেছে, ওই যুবকদের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা মেলেনি। সে কারণে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
বরগুনায় স্ত্রীর সামনে স্বামীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের বিষয়ে কারো কাছে কোনো তথ্য থাকলে তা পুলিশকে জানাতে সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা এ অনুরোধ জানান।এদিকে এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এরই মধ্যে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। জড়িত অন্যদেরও গ্রেপ্তারের সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আসামিরা যেন দেশত্যাগ করতে না পারে, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট সব বিমানবন্দর, স্থলবন্দর ও নৌবন্দরগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।