স্টাফ রিপোর্টার : টাঙ্গাইল রেলওয়ে স্টেশনে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট পাওয়া না গেলেও অতিরিক্ত টাকার স্টেশনের দোকানে সিটসহ টিকেট মিলে। কালোবাজির মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে টিকেট পেলেও সাধারণ যাত্রীরা পায় না। ফলে টাঙ্গাইল থেকে দাঁড়িয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় যাতায়ত করতে হচ্ছে যাত্রীদের। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা। এই অবৈধ কালোবাজারির সাথে জড়িত সহকারী স্টেশন মাস্টার থেকে শুরু করে স্টেশনের কুলি। শুধু সহকারী স্টেশন মাস্টার ও কুলির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, স্টেশনের পাশের চায়ের দোকানে ট্রেনের টিকেট মিলে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টাঙ্গাইল স্টেশনের সহকারি স্টেশন মাস্টার, বুকিং সহকারী, বুকি মাস্টার, টি ম্যান, পোর্টার, টিকেট মাস্টার ও কুলিরাও টিকেট কালোবাজারির সাথে জড়িত রয়েছে। এর আগে সহকারি স্টেশন মাস্টার মো. সোহেল, টিকেট মাস্টার মো. আশরাফসহ তিনজন কালোবাজির মাধ্যমে টিকেট বিক্রির সময় গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যদের হাতে আটক হয়। পরে মুচলেকা দিয়ে তারা ছাড়া পান। শুধু সোহেল নয়, টাঙ্গাইল স্টেশনের বুকিং সহকারী মো. হান্নান সরকার, টিকেট মাস্টার মো. আরিফ, মো. আশরাফুল, টি ম্যান মো. তারেক, মো. ফজলুল হক ও পোর্টার মো. বাদশা টিকেট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব স্টেশনের মাস্টার আ. মান্নান, বুকিং সহকারী মো. রেজাউল, মো. শরিফুল ইসলাম, টিকেট মাস্টার মো. রিপন ও মির্জাপুর স্টেশন মাস্টার মো. কামরুল, সহকারী স্টেশন মাস্টার মো. বকুল আহমেদও এই টিকেট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত রয়েছে।
সরেজমিনের টাঙ্গাইল স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, বুকিং অফিসের সামনে ট্রেন যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন। বুকিং অফিসের দরজায় লেখা ‘কাউন্টারের ভিতরে জনসাধারণের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিশেধ’। তবে স্টেশনের কুলি প্রতিনিয়ত অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে বুকিং মাস্টারদের সহযোগিতায় প্রবেশ করছে ও বের হচ্ছে। এমন সময় কুলি মো. মাসুদ, টোটন মিয়া ও টুটুল মিয়াকে চোখে পড়লো। তিনজনই লুঙ্গি পড়া হাতে মোবাইল। মাঝে মাঝে মোবাইলে কথা বলে ভিতরে যাচ্ছে আর টিকেট এনে অন্য জায়গায় গিয়ে কাঙ্খিত ব্যক্তিকে অধিক টাকার বিনিময়ে টিকেট দিচ্ছে। এদিকে লাইনের যাত্রীরা দাঁড়িয়ে থেকে হতাশ হচ্ছে সিট না পেয়ে। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীরা টিকেট না পেলেও ওই তিন কুলিকে বার বার বুকিং অফিসে যাতায়াত করতে দেখা যায়।
মো. হযরত আলী নামে এক যাত্রী বলেন, আমি ২০ মিনিট লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও সিটসহ টিকেট পাইনি। আসন সংখ্যার চেয়ে যাত্রী বেশি হলেও এই স্টেশনের যাদের লোক আছে বা যারা প্রভাবশালী তারাই একমাত্র সিটসহ টিকেট পায়। তাছাড়া অন্য কেউ পায় না। তবে অতিরিক্ত টাকায় কালোবাজারিতে টিকেট পাওয়া যাচ্ছে। যা সবার পক্ষে কেনা সম্ভব হয়না।
রতিমা রাণী নামে অপর এক যাত্রী বলেন, আমি মাঝে মাঝেই ঢাকায় যাতায়াত করি। এই স্টেশনের কুলি মো. মাসুদ মিয়া আমাকে টিকেট ব্যবস্থা করে দেয়। আজকেও সে ব্যবস্থা করে দিয়েছে। ১১৫ টাকার টিকিট ১৮০ টাকা দিয়ে কিনেছি।
রুস্তম আলী নামে আরেক যাত্রী বলেন, যখন টিকেট মাস্টার মো. আশরাফের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে টিকেট কিনি তখন সিট পাই। আজকে অতিরিক্ত টাকা দেই নাই বলেন সে সিট ছাড়া টিকেট দিয়েছে। এর প্রতিবাদ করলে সে খারাপ আচরণও করে আমার সাথে। যা দেখার কেউ নেই।
এ বিষয়ে স্টেশনের টি ম্যান ফজলুল হক বলেন, আপনার যে কোন সময় যেকোন ট্রেনের টিকেট লাগলে আমাকে জানাইয়েন আমি সিটসহ টিকেটের ব্যবস্থা করে দিবো। তবে টিকেটের দামের চেয়ে কিছু টাকা বাড়িয়ে দিতে হবে। সহকারি স্টেশন মাস্টার সোহেলের সহযোগিতায় টিকেট মাস্টার কিছু টিকেট ব্যবস্থা করে থাকে। সেই টিকেট আমি প্রতিদিন ১০-১২টা করে পেয়ে থাকি।
টুটুল ও মাসুদ মিয়া নামের দুই কুলি বলেন, আগে স্টেশনে অনেকেই বড় বড় ফ্রীজ, মোটরসাইকেল আলমাড়ী নিয়ে আসতো। সেই কাজ করে আমরা অনেক টাকা আয় করতাম। এখন আর আগের মতো কাজ নেই। তাই সহকারী স্টেশন মাস্টার ও টিকেট মাস্টারদের সহযোগিতায় কিছু টিকেট নিয়ে তা বেশি দামে বিক্রি করে চলি।
স্টেশনের পাশের দোকানদার মো . আজহার আলী বলেন, এখন আর আগে মতো টিকেটের ব্যবস্থা করি না। পরিচিত ছাড়া কাউকে টিকেটও দেই না। প্রশাসনের লোক থাকে। তারা আমাকে নজরদাড়ির মধ্যে রাখছে। আপনি মোবাইল নাম্বার নিয়ে যান। টিকেট লাগার কিছুক্ষণ আগে জানাইয়েন ব্যবস্থা করে দেবো।
স্টেশনের টিকেট মাস্টার মো. আরিফ বলেন, পরিচিত মানুষ কেউ অনুরোধ করলে তাদের টিকেট ব্যবস্থা করে দেই।
অভিযোগের বিষয়ে টাঙ্গাইলের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টার মো. সোহেল বলেন, টিকেট কালোবাজারি আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। স্টেশনের কুলি ও পাশের দোকানদারা যে টিকেট সংগ্রহ করে সেটা টিকেট মাস্টারদের যোগসাজসে করে থাকে বলে স্বীকার করলেও মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পাওয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।