ধনবাড়ী সংবাদদাতা : টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী পাঁচপোটল ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রশিদ ও সহকারী অধ্যপক নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে জাল সনদ ও ভুয়া নিয়োগ বোর্ড সাজিয়ে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ, জালিয়াতির মাধ্যমে পদোন্নতি, জাল সনদে এমপিও ভুক্তিসহ ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রায় ডজনখানেক শিক্ষক-কর্মচারীকে জনপ্রতি ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে জাল সনদে নিয়োগ ও এমপিও ভুক্তিরনামে কোটি টাকা বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।
এ ব্যাপারে কলেজ গভর্নিংবডির সাবেক সভাপতি ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. জহির উদ্দিন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর মায়মনসিংহ অ লের উপ-পরিচালক, মহা-পরিচালক মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, ঢাকা এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এছাড়া স্থানীয় এমপি কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক ও জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর অত্র কলেজের অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিকার চেয়ে অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, অধ্যক্ষ আব্দুর রশিদ ও সহকারী অধ্যপক নজরুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে জাল সনদে ২০০৪ সালে ভুয়া নিয়োগ বোর্ড সাজিয়ে হিসাব বিজ্ঞানে জুলহাস উদ্দিন, ইসলাম শিক্ষায় ফয়জুর রহমান ও দর্শনে আবু সালে মোস্তফাকে নিয়োগ দেখিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এমপিওর জন্য মহা-পরিচালক মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বরাবর পাঠিয়েছে। অথচ কলেজের শুরু থেকে অদ্যাবদি কোন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ তালিকাতেই তাদের নাম নেই। এছাড়া সাবেক সভাপতি জহির উদ্দিনের স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া নিয়োগ বোর্ড সাজিয়ে রেজুলেশন ও রেজাল্ট সীট তৈরী করে সমাজ বিজ্ঞানে নাসিমা পারভিন, হিসাব বিজ্ঞানে রফিকুল ইসলাম ও গ্রন্থাগারিকে শাপলা খাতুনকে নিয়োগ দেখিয়ে এমপিও ভুক্তির জন্য পাঠানো হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের একাধিক শিক্ষক জানান, শুধু এই ৬ জনই নয় আরো ৪/৫ জনের নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে জাল সনদে নিয়োগ দেখিয়ে এমপিও ভুক্তির জন্য পাঠিয়েছে।
অভিযোগপত্র, নিয়োগ বোর্ডের রেজুলেশন ও তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১৯৯৮ সালের ১৫ মার্চ অভিযুক্ত মো. নজরুল ইসলাম পাঁচপোটল ডিগ্রী কলেজে প্রভাষক হিসাবে যোগদান করেন। ২০০৪ সালে এমপিও ভুক্তির সময় তিনি শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে মাস্টার্স ২য় শ্রেণি উল্লেখ করেন। তৎকালীন সময়ে জাল সনদের বিষয়টি উল্লেখ করে আবেদন করলে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রাশেদুল হাসান ২০০৭ সালের ২১ জুন তদন্ত শেষে প্রভাষক নজরুল ইসলামের মাস্টার্সের সনদটি জাল বলে সনাক্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
এছাড়াও কলেজের সাবেক সভাপতি ইমরুল কায়েছ মুরাদ কলেজ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এনে আবেদন করলে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ শরিফুল ইসলাম সরেজমিনে তদন্ত করে অধ্যক্ষ আব্দুর রশিদের বিরুদ্ধে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার তথ্য গোপন করে এমপিও ভুক্তি, প্রভাষক মো. নজরুল ইসলামের মাস্টার্সের সনদ জাল, কলেজের আয়-ব্যায় এর হিসাব সংরক্ষণ না করা, অডিট আপত্তির জবাব না দেয়াসহ কারিগরী শাখায় নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির সংশ্লিষ্টতা পান। সে সময় তদন্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারীতে ধনবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক বরাবর আবেদন করেন।
এ ব্যাপারে কলেজ গভর্নিংবডির সাবেক সভাপতি ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জহির উদ্দিন বলেন, কলেজটি মূলত অধ্যক্ষের পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অধ্যক্ষের বড় ভাই প্রতিষ্ঠাতা নামধারী আবুল হোসেন, ছোট ভাই নাজমুল হাসান নাজু এবং প্রভাষক নজরুল ইসলাম হিরু মিলে একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে জালিয়াতি করে নিয়োগ বাণিজ্য ও প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যায়ের হিসাব সংরক্ষণ না করে কোটি-কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এছাড়া ২০১৪ সালে আমি সভাপতি থাকাকালীন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোন নিয়োগ পরিক্ষা হয়নি এবং কাউকে নিয়োগও দেয়া হয়নি। অথচ কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ আব্দুর রশিদ ও সহকারী অধ্যাপক নজরুল ইসলাম আমার স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া নিয়োগ বোর্ড বানিয়ে বিভিন্ন পদে ৩ জনকে নিয়োগ দিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এমপিও ভুক্তির জন্য পাঠিয়েছে।
এ ব্যাপারে অধ্যক্ষ আব্দুর রশিদ তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নিজেদের মধ্যে কোন্দলের কারণে এবং একটি পক্ষের স্বার্থ হাসিল না হওয়ায় এসব অভিযোগ তুলেছেন। ইতিপূর্বে কিছু অনিয়ম থাকলেও তা সমাধান করা হয়েছে।
ধনবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফা সিদ্দিকা অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে জানান, এ ব্যাপারে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।