সখীপুর প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের সখীপুরে বড়চওনা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের এক একর জমির মালিকানা নিয়ে জটিলতা দেখা দেওয়ায় ওই হাসপাতালের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গত এক সপ্তাহ আগে হাসপাতালের ওই জমিকে সরকারি খাস দাবি করে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আয়শা জান্নাত তাহেরা একটি সাইনবোর্ড সাঁটিয়ে দেওয়ায় নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখা হয়। ৫৫ বছরের ওই হাসপাতালটি বড়চওনা বাজারে থাকবে কি-না তা নিয়েও জনমনে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় ভূমি কার্যালয় ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, বড়চওনা গ্রামের বিত্তশালী মোকছেদ আলী সরকার বড়চওনা মৌজার এক নম্বর খতিয়ানের ৪৮ দাগে তাঁর দখলীয় এক একর জমি ওই হাসপাতালের জন্য দান করেন। ১৯৬৪ সালের ১৩ আগস্ট টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সাগরদিঘী সাবরেজিস্ট্রি কার্যালয়ে গিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর ওই ব্যক্তি ওই জমি দানপত্র দলিল করে দেন। এরপর স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ ওই জমিতে হাসপাতালের জন্য একটি টিনসেড ভবন ও চিকিৎসা কর্মকর্তার জন্য একটি আবাসিক ভবন নির্মাণ করেন। প্রায় ৫৫ বছর ধরে ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে ওই এলাকার লোকজন সেবা পেয়ে আসছেন।
সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, সম্প্রতি ওই উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করার জন্য জেলা স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ উদ্যোগ গ্রহণ করে। এর প্রেক্ষিতে বড়চওনা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের এক একর (১০০ শতাংশ) জমি চিহ্নিত করতে গিয়ে মাত্র ২৩ শতাংশ জমি হাসপাতালের দখলে পাওয়া যায়। বাকি ৭৭ শতাংশ জমি হাসপাতাল ঘেঁষে পাকা সড়কের পশ্চিম পাশে বড়চওনা হাট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ওই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আরও জানান, হাসপাতালের এক একর জমি উদ্ধারের জন্য গত ১১ মার্চ সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) আমি চিঠি দেই। পরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সরেজমিন ওই জমির কাগজপত্র খুঁজে জানতে পারেন- ওই হাসপাতালের জন্য দান করা জমি রেকর্ডভূক্ত বা ব্যক্তিমালিকানা সম্পত্তি নয়। হাসপাতালের ৪৮ দাগের মোট দুই একর ৩৭ শতাংশ জমিই সরকারি খাস জমি। যাঁর মালিক জেলা প্রশাসক।
হাসপাতালের জমিদাতা মোকছেদ আলী সরকার ১৯৯০ সালে মারা গেছেন। তাঁর ছেলে কালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হালিম সরকার বলেন, আমার বাবা ওই হাসপাতালে দখলীয় এক একর জমি দান করেছেন। ওই জমি সরকারি খাস জমি নয়। ১৯৬২ সালে ওই জমি আমার বাবার নামে রেকর্ড হয়েছে। ২০০৮ সাল পর্যন্ত ওই জমির খাজনাও দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ৬২ সালের রেকর্ড নিয়ে জটিলতা চলছে। উপজেলায় এ ধরনের ৩৫ হাজার একর জমির মধ্যেই এ ধরনের জটিলতা রয়েছে। এটা যদি খাস জমিই হয় তাহলে কীভাবে (১৯৬৪ সালে) সাবরেজিস্টার ওই দলিলে সাক্ষর দিলেন। আর স্বাস্থ্য বিভাগ কীভাবে ওই জমি বুঝে নিয়ে হাসপাতাল ও আবাসিক ভবন নির্মাণ করলেন।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আয়শা জান্নাত তাহেরা বলেন, বড়চওনা মৌজার ৪৮ দাগে হাসপাতালের জমিসহ দুই একর ৩৭ শতাংশ জমি সরকারি খাস। ওই জমি সংরক্ষিত হওয়ায় একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আমিনুর রহমান বলেন, বড়চওনা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের জমি সরকারি খাস যা এক নম্বর খতিয়ানভূক্ত। খাস জমির মালিক সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসক। কোনো ব্যক্তি ওই জমি দান করতে পারেন না। যদি করেও থাকে তা হবে অবৈধ।
টাঙ্গাইল জেলা সিভিল সার্জন শরীফ হোসেন খান মুঠোফোনে জানান, ওই জমির বিষয় নিয়ে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে। সমাধান হলে হাসপাতালের জমির দখল বুঝে নিয়ে শিগগিরই বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।