স্টাফ রিপোর্টার : পর্যটন নগরী কক্সবাজার থেকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব পদটি চলে গেল যমুনা নদীর তীরবর্তী জেলা টাঙ্গাইলে। প্রশাসনের সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ এ পদে আনুষ্ঠানিকভাবে নিয়োগ পেয়েছেন সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। চুক্তিতে মন্ত্রিপরিষদের সচিবের দায়িত্বে থাকা শফিউল আলমের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন তিনি।জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় রোববার (১৩ অক্টোবর) দেশের ২২ তম মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকেই উচ্ছ্বাস তৈরি হয়েছে টাঙ্গাইলে। টাঙ্গাইল জেলা সদর থেকে শুরু করে শৈশবের নাড়িপোঁতা ভিটা নাগরপুর উপজেলায় পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকানে শুরু হয়েছে নানান ইতিবাচক আলোচনা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও চলছে মাতামাতি। প্রথমবারের মতো সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা বিভাগের কাজের সমন্বয় সাধনের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব হিসেবে নিজেদের কৃতি সন্তানের দায়িত্ব প্রাপ্তিতে গর্বিত এখানকার দলমত নির্বিশেষে সবাই।
আনোয়ারুল ইসলাম ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। তিনি কেন্দ্রীয় ও মাঠ প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। মাঠ প্রশাসনে উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
এছাড়া জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পরিচালক, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব এবং উপসচিব, ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদপ্তরের পরিচালক, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব হিসেবেও খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম দায়িত্ব পালন করেছেন।
বিশ্বব্যাংক, ইউএনএফপিএ, এডিবি, সিআইডিএ, ডিজিআইএস, ইউএনডিপি এর অর্থায়নে পরিচালিত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে উপপরিচালক, উপ-প্রকল্প পরিচালক, প্রকল্প পরিচালক এবং জাতীয় প্রকল্প পরিচালক হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতাও তাঁর রয়েছে।
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ২০১১ সালের ১৩ নভেম্বর সেতু বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব হিসেবে যোগ দেন। তিনি ২০১৩ সালের ৩১ জানুয়ারী সচিব পদে পদোন্নতি পান। ২০১৭ সালের ১৩ জুলাই সিনিয়র সচিব হন।
খন্দকার আনোয়ারুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগ থেকে বিএসএস (অনার্স) এবং এমএসএস ডিগ্রি অর্জন করেন। তার চিরসঙ্গী কামরুন নাহার মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব। দীর্ঘ চাকরি জীবনে নিজের মেধা ও যোগ্যতায় তিনিও স্বনামে খ্যাত।
জানা যায়, মন্ত্রিসভা ও বিভিন্ন মন্ত্রিসভা কমিটির সচিবের দায়িত্ব পালন করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ মাঠ প্রশাসন তথা বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) কাজের তদারিক করে থাকে।
সরকারের পুরো কার্যক্রম পর্যালোচনা ও সমন্বয়ের অন্যতম ফোরাম সচিব সভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব এ সভার সভাপতি। তাছাড়া মন্ত্রিপরিষদ সচিব সিভিল প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন পদগুলোতে পদোন্নতির সুপারিশকারী সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) সভাপতি হলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
জনপ্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদ মন্ত্রিপরিষদ সচিব পদে সেতু বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বিদায়ী শফিউল আলমের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন, মাস দুয়েক আগে এমন তথ্য জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ২০১৫ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে এ পদে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন শফিউল।
সিদ্ধান্ত আগেভাগে হলেও আনুষ্ঠানিক নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে অধীর অপেক্ষা ছিল। অবশেষে সেই প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে রোববার (১৩ অক্টোবর) প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে সুসংবাদ দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরপর থেকেই অভিনন্দন বার্তায় ভাসছেন নতুন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তাকে গুরুত্বপূর্ণ এ দায়িত্ব দেওয়ায় প্রশংসায় ভাসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।
টাঙ্গাইলের স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, একজন সদালাপী ও বিচক্ষণ মানুষ হিসেবে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম পরিচিত। তাঁর মাঝে কখনো লোভ লালসা বা জেদ কাজ করেনি। এলাকায় তাঁর যাতায়াত কম থাকলেও নিজের কর্মগুণেই তিনি দেশের সব মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবেন। এবং দায়িত্ব পালনেও তিনি সফল হবেন।
মেধাবী ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম নতুন মন্ত্রিপরিষদ সচিব হওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন জাফর আহমেদ বলেন, ‘একজন সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তা হিসেবে প্রশাসন ক্যাডারে সুপরিচিত খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। যোগ্য একজন ব্যক্তিকেই মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে প্রধানমন্ত্রী বেছে নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এ সিদ্ধান্তে আমরা গর্বিত। আমাদের এলাকার সবাই অনেক খুশি।’
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) টাঙ্গাইল জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট খান মোহাম্মদ খালেদ বলেন, ‘আমি নিজেও টাঙ্গাইলের নাগরপুরের সন্তান। মন্ত্রিপরিষদ সচিব নিজেও একই এলাকার কৃতি সন্তান। আমাদের টাঙ্গাইল জেলা থেকে প্রথমবারের মতো প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ে তিনি অধিষ্ঠিত হয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বপূর্ণ এ সিদ্ধান্তে গোটা টাঙ্গাইল এলাকার মানুষ আনন্দিত। একই সঙ্গে আমাদের প্রত্যাশা নতুন মন্ত্রিপরিষদ সচিবের হাত ধরেই টাঙ্গাইলে এবার কাঙ্খিত উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে।’