মোঃ মশিউর রহমান/টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের বিভিন্ন উপজেলায় নামমাত্র মজুরিতে ইটভাটায় কাজ করছে হাজার হাজার শিশু। পরিবারের অর্থ উপার্জনের জন্য ইটভাটায় ৫০ থেকে ৬০ টাকা মজুরিতে দিন-রাত কাজ করছে দরিদ্র পরিবারের এই শিশুরা।
স্কুলের গণ্ডি না পেরোতেই পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দিন দিন শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বিভিন্ন উপজেলার মধ্যে উল্লেখযোগ্য মির্জাপুর উপজেলার প্রায় শতাধিক ইট ভাটায় দেড় সহস্রাধিক শিশু শ্রমিক কাজ করছে। বেশ কয়েকটি ইটভাটা ঘুরে শিশু শ্রমিকদের এমন চিত্রই দেখা গেছে।
মির্জাপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস সূত্র জানায়, পৌরসভা ও ১৪ ইউনিয়নে ১১২ ইটভাটা গড়ে উঠেছে। পৌরসভা, মহেড়া, জামুর্কি, গোড়াই, লতিফপুর, তরফপুর, আজগানা ও বাঁশতৈল ইউনিয়নেই রয়েছে ৯২ ইট ভাটা।
এসব ইটভাটায় কাজ করছে উত্তরাঞ্চলের সিরাজগঞ্জ, রংপুর, বগুড়া, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, সাতক্ষিরা, নাটোর, কুষ্টিয়া, জামালপুর, শেরপুর’সহ বিভিন্ন জেলার শ্রমিকরা। বাবা-মায়ের সঙ্গে ইট ভাটায় কাজ করছে শিশুরা। যাদের বেশির ভাগের বয়স ৮-১১ বছর। দিন রাত কাজ করে এসব শিশু মজুরি পায় ৫০-৬০ টাকা। হারভাঙ্গা পরিশ্রম করার পরও তাদের মুখে একদিকে রয়েছে ক্লান্তির ছাপ, আবার অপরদিকে রয়েছে সামান্য টাকার জন্য এক ঝিলিক হাসির ছাঁপ। শিশু শ্রমিকরা জানায়, পড়ালেখার অনেক ইচ্ছে ছিল। বাবা-মায়ের অভাবের সংসার। স্কুল বন্ধ থাকায় তারা আমাদের সঙ্গে নিয়ে ইটভাটায় কাজের সন্ধানে এসেছে। কি আর করবো। এখন আমরা কম মজুরীতে ইটভাটায় কাজ করি। একই অবস্থা দেখা গেছে উপজেলার বাইমহাটি, দেওহাটা, সোহাগপুর, ধেরুয়া, সৈয়দুপর, কোদালিয়া, হাটুভাঙ্গা, আজগানা, বাঁশতৈল, তরফপুরসহ বিভিন্ন ইটভাটায়।
এ ব্যাপারে কথা হয় ইট ভাটায় কাজ করতে আসা কয়েকজনের সাথে। তারা জানায়, অভাবের সংসার, এজন্য তাদের ভবিষ্যৎ জীবন যেমন অনিশ্চিত হয়ে পরছে তেমনি দেশে বাড়ছে বেকার সমস্যা। শিশু শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়া রোধে বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি সরকারী ভাবে অভিভাবকদের সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড এবং এসব অসহায় শিশুদের উদ্ধার করে তাদের পড়াশোনা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যে সব শিশু বিভিন্ন ইটভাটায় কাজ করছে তাদের তালিকা সংগ্রহ করে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের বোর্ড সভার মাধ্যমে তাদের সহযোগিতা করা যেতে পারে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবদুল মালেক বলেন, পরিবারের দরিদ্রতা ও বাবা মায়ের অসচেতনতার কারণেই অনেক পরিবারের শিশুরা ইটভাটাসহ বিভিন্ন কারখানা ও দোকান পাটে ভারী কাজ করে থাকে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা ও পরামর্শ করে এসব শিশুদের সহযোগিতার উদ্যোগ নেওয়া হবে।