আরমান কবীরঃ টাঙ্গাইল জেলায় কোন কিশোর গ্যাং থাকবে না। জেলায় যেন কিশোর গ্যাংয়ের উৎপত্তি না হয়, কোন কিশোর যেন অপরাধের সাথে জড়িয়ে না পড়ে, তার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহন করেছে টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ। এই তথ্য গণমাধ্যমকে দিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধায় (২২ আগস্ট) এক সংবাদ সম্মেলন করেছেন টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়।
এই বিষয়ে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় জানান, কিশোর অপরাধে সম্পৃক্ত বেশ কয়েকজনকে এরই মধ্যে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। ভবিষ্যতে টাঙ্গাইলে যেন আর কিশোর অপরাধ না বাড়ে, এজন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় সচেতনতামূলক প্রচারনা চালানো হচ্ছে। অভিভাবকদের আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
কিশোরদের অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার কথা স্বীকার করে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম বলেছেন, কিশোররা যাতে অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে না পরে, এজন্য সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্কাউট আন্দোলন জোরদার করা হয়েছে। স্কাউটিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নিয়মানুবর্তিতা ও ভালো মানুষ হওয়ার শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। ফলে স্কুল শিক্ষার্থীদের মধ্যে অপরাধপ্রবনতা কমে আসবে। কিশোর অপরাধ যাতে শূন্যের কোঠায় চলে আসে, সেজন্য স্কুল-কলেজে সচেতনতামূলক শিক্ষা দেয়া হচ্ছে।
কিশোর অপরাধ বা কিশোর গ্যাং এর টাঙ্গাইলের বাস্তব চিত্র কিছুটা ভিন্ন। জেলায় কিশোরদের সুনির্দিষ্ট কোনো গ্যাং না থাকলেও সংঘবদ্ধ কিশোর অপরাধের কমতি নেই।
নানা ছুতোয় ‘পাটির আয়োজন করা, উচ্চ শব্দে হর্ন বাজিয়ে বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালানো, রাস্তার মোড়ে মোড়ে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা, দলবেঁধে উশৃঙ্খল ভাবে ঘুরে বেড়ানো, এগুলো টাঙ্গাইলে শহরে একরকম নিয়মে পরিণত হয়েছে। ইদানিং একই বিদ্যালয়ে সহপাঠীদের মধ্যে সামান্য মতানৈক্যের কারণেও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করার কয়েকটি ঘটনাও ঘটছে।
বিশেষ করে টাঙ্গাইল শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যান, শহরের ক্যাপসুল মার্কেট, আনসার ক্যাম্প সংলগ্ন পুকুর পাড়, টাঙ্গাইল গার্লস স্কুল মোড়, বিন্দুবাসিনী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের আশেপাশে, কুমুদিনী মহিলা কলেজের সামনে, মাহমুদুল হাসান কলেজের সামনে, এসপি পার্ক এলাকা, ডিসি লেক সহ বেশকিছু স্থানে আড্ডার নামে ১৪ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোরদের বখাটেপনা চলে। স্কুল-কলেজ চলাকালীন সময়ে এই আড্ডা বেশী দেখা যায়।
জানা গেছে, নিজেদের সংগঠিত করার জন্য এরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটারকে ব্যবহার করছে হরদম। টাঙ্গাইলে সক্রিয় প্রতিটি গ্রুপের সদস্যদের কাছে রয়েছে ধারালো অস্ত্র। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে নিজেদের মধ্যেও খুনাখুনির ঘটনাও ঘটছে।
অভিভাবক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদাসীনতার সঙ্গে ‘রাজনৈতিক বড়ভাইদের’ প্রশ্রয়ে এরা দিন দিন হয়ে পড়ছে নিয়ন্ত্রণহীন। বিশেষ করে দল বেঁধে উচ্চ-মধ্যবিত্ত ঘরের উঠতি বয়সী এই কিশোরদের মোটরসাইকেলের রেস স্থানীয়দের জন্য আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। টাঙ্গাইলে এরকম একাধিক গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে।
কয়েকজন কলেজ ছাত্রের সঙ্গে কথা জানা যায়, কিশোর গ্রুপগুলোর মধ্যে নিজেদের বা দল বা গ্যাংকে বড় করার একটা প্রবনতা রয়েছে। দল যত বড় হবে কথিত বড়ভাইদের কাছে কদরও তত বাড়বে। আর সংঘাত ও মারামারিতে বিজয়ী হওয়া সহ রাজনৈতিক দলের মিছিল-মিটিংয়ে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে অনেক সুবিধাও পাওয়া যায়।
মাদকের ছোবলে এরা আর অশান্ত হয়ে উঠছে। আর এই গ্যাং কালচারে শিক্ষিত ও অল্পশিক্ষিত, উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেনীর কিশোররাই বেশি সম্পৃক্ত। তাদের মধ্যে জাহির করার একটা প্রবনতা ভীষণভাবে কাজ করছে।
এ প্রসঙ্গে মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জহিরুল ইসলাম জানান, মা-বাবার বিবাহ বিচ্ছেদসহ পারিবারিক নানা অশান্তি সন্তানকে অতিরিক্ত প্রশ্রয় দেয়ার কারণে সন্তানরা স্কুল-কলেজ থেকে ঝরে পড়ছে। সেখান থেকেই তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিসহ বিভিন্ন গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িয়ে মাদকসেবন ও মাদক বহন থেকে শুরু করে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। কিশোর বয়সেই তারা হয়ে উঠছে ভয়ঙ্কর অপরাধী।
টাঙ্গাইল রড ও রাজমিস্ত্রি অফিসে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ
টাঙ্গাইল জেলা রড ও রাজমিস্ত্রি শ্রমিক অফিসে হামলা ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। শনিবার বিকেলে সদ্য মৃত্যুবরণ করা সংগঠনের উপদেষ্টা মজনু মিয়ার দোয়া মাহফিলে খিচুরি দেয়া নেয়াকে কেন্দ্র...