আলোকিত বাংলা ডেস্ক: টাঙ্গাইলের যমুনা নদীর ওপর নির্মিত যমুনা সেতু থেকে ৩০০ মিটার অদূরে দেশের দীর্ঘতম নির্মাণাধীন রেলসেতু এখন পুরোটাই দৃশ্যমান। নির্মাণাধীন এই সেতুটিতে বসানো হয়েছে সব কটি স্প্যান। ইতোমধ্যে সেতুটির ৯৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে। বাকি রয়েছে মাত্র ৪ শতাংশ কাজ। এ কাজ শেষ হলেই ডিসেম্বরে হতে পারে উদ্বোধন। এতে বিরতিহীনভাবে ৮৮টি ট্রেন দ্রুতগতিতে পারাপার হতে পারবে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের সেতুর পূর্ব প্রান্তে কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়েছে এবং সিরাজগঞ্জের পশ্চিম প্রান্তেও পুরোপুরি কাজ শেষের দিকে বলে জানা যায়। এ ছাড়া সেতুর পূর্ব ও পশ্চিম স্টেশন আধুনিকায়নের কাজও শেষ পর্যায়ে।
মো:মাহাবুব আলম (মেরিন চিফ ইঞ্জিনিয়ার) জানান, ‘নির্মাণাধীন রেলসেতুর কাজ ইতোমধ্যে ৯৬ শতাংশ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া নির্মাণ ব্যয়ও বাড়ছে না। চলছে ঘষামাজা ও রঙের কাজ। আশা করছি, চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে উদ্ধোধন হতে পারে। সেই লক্ষ্য নিয়ে দ্রুত গতিতে রাতদিন কাজ করা হচ্ছে। ’রেলসেতুর ইনপাত ঘেষে গ্যাসের লাইন এর কাজটিও সেতুর পূর্ব প্রান্তে কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়েছে কিন্তু সিরাজগঞ্জের পশ্চিম প্রান্তেও পুরোপুরি কাজ শেষের দিকে বলে জানা যায়। এটি অন্য একটি কোম্পানি কাজ করছে। দ্রুত হয়ে গেলে আশা করা যায় ডিসেম্বর নাগাত উদ্বোধন করা যাবে।
মোল্লা দাঊদ আলী ( রেল সেতুর সেফটি অফিসার) বলেন-ইতোমধ্যে ৯৬ শতাংশ রেলসেতুর কাজ শেষ হয়েছে। আশা করছি, চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে উদ্ধোধন হতে পারে। আমরা সকল বিষয়ে সেফটি সহিত কাজ করছি। ১০০% বাংলাদেশের ওয়েদার কোট অনুযায়ি স্প্যান এবং ইসপাত লাগানো হচ্ছে।
এই প্রকল্পে খবর নিয়ে জানা গেছে, ২০২১ সালে মার্চ মাসে সেতুটির ৩০০ মিটার উজানে পাইলিংয়ের মাধ্যমে রেলসেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে নির্মাণকাজের ব্যয় প্রথমে ধরা হয় ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। পরবর্তীতে এ প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানো হয়। এতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৫ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। এর মধ্যে দেশীয় অর্থায়ন ২৭ দশমিক ৬০ শতাংশ। অবশিষ্ট ৭২ দশমিক ৪০ শতাংশ ঋণ দিয়েছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)।
এর আগে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে নেওয়া প্রকল্পে চূড়ান্ত নকশা প্রণয়নসহ রেল সেতুর নির্মাণ ব্যয় প্রথমে ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা ধরা হয়েছিল। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) দেশের বৃহত্তর এ রেলসেতু নির্মাণে ৭ হাজার ৭২৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। প্রথম দফা ডিপিপি সংশোধনের পর সেতুর নির্মাণ ব্যয় ৭ হাজার ৪৭ কোটি টাকা বেড়ে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় দাঁড়ায়।
এই রেল সেতুর সমান্তরাল ডুয়েলগেজ ও ডাবল ট্র্যাকসহ প্রায় ৪ দশমিক ৮০ কিলোমিটার রেলসেতুর দুই পাশে ০.০৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট, ৭ দশমিক ৬৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ এমব্যাংকমেন্ট এবং লুপ ও সাইডিংসহ রেললাইন নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পে রেলপথের পাশাপাশি সেতুর গ্যাস সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হয়েছে।