স্পোর্টস ডেস্কঃ ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে উইন্ডিজদের হারিয়ে প্রথম শিরোপা জিতলো বাংলাদেশ। মাশরাফি বিন মোর্ত্তজার নেতৃত্বে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ বাদে এই প্রথম কোনো ট্রফি জয়ের স্বাদ পেলো টাইগাররা। ক্যারিবীয়ানদের ৫ উইকেটে হারিয়ে দিয়েছে লাল-সবুজের জার্সিধারীরা। বল বাকি ছিল আরও ৭টি। এর আগে ছয়বার ফাইনালে উঠেছিল টাইগাররা। আর এই ফাইনাল নিয়ে সপ্তম ফাইনালে খেলতে নামে লাল-সবুজের জার্সিধারীরা। লাকি সেভেন হয়েই বাংলাদেশের শিরোপা জয়টি আসলো।
ডাবলিনে বৃষ্টির কারণে ম্যাচটি বন্ধ থাকে। আবার বল মাঠে গড়ালেও ম্যাচ নামিয়ে আনা হয় ২৪ ওভারে। তাতে ক্যারিবীয়ানরা ১ উইকেট হারিয়ে তোলে ১৫২ রান। বৃষ্টি আইনে (ডাকওয়ার্থ লুইস মেথডে) টাইগারদের টার্গেট দাঁড়ায় ২১০ রান। ২২.৫ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে নোঙ্গর করে টাইগাররা।
ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে শ্যানন গ্যাব্রিয়েল ফিরিয়ে দেন তামিম এবং সাব্বিরকে। দলীয় ৫৯ রানের মাথায় ১৩ বলে ১৮ রান করে বিদায় নেন তামিম, সাব্বির কোনো রান করার আগেই সাজঘরে ফেরেন। ১০.৩ ওভারে বাংলাদেশ দলীয় শতক তুলে নেয়। যা টাইগারদের ওয়ানডে ইতিহাসে দ্রুততম দলীয় শতক। ২৭ বলে ফিফটি করেন সৌম্য সরকার। বাংলাদেশের চতুর্থ দ্রুততম ফিফটি এটি। টানা তিন ম্যাচেই ফিফটির দেখা পেলেন দেশের মাটিতে সবশেষ ম্যাচে ডাবল সেঞ্চুরি করা সৌম্য। ইনিংসের ১২তম ওভারে বিদায় নেন সৌম্য। তার আগে মুশফিকের সঙ্গে ৪৯ রানের জুটি গড়েন। বাঁহাতি এই ওপেনারের ব্যাট থেকে আসে ৬৬ রান। তার ৪১ বলে সাজানো ঝড়ো ইনিংসে ছিল ৯টি চার আর তিনটি ছক্কার মার।
১৪তম ওভারের শেষ বলে এলবির ফাঁদে পড়েন মুশফিকুর রহিম। রেইফারের বলে আউট হওয়ার আগে ২২ বলে দুই চার, দুই ছক্কায় মুশফিক করেন ৩৬ রান। দলীয় ১৩৬ রানের মাথায় চতুর্থ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ব্যক্তিগত ১৭ রান করে ফেরেন মোহাম্মদ মিঠুন। তার আগে ১৪ বল খেলে একটি চারের সঙ্গে তার ব্যাট থেকে আসে একটি ছক্কা। ২০ বলে ফিফটি করেন মোসাদ্দেক হোসেন। যা বাংলাদেশের তৃতীয় দ্রুততম ফিফটি। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ২১ বলে ১৯ রান করে অপরাজিত থাকেন। কাজের কাজটি করেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। ২৪ বলে করেন অপরাজিত ৫২, যেখানে চার ছিল দুটি আর ছক্কার মার ছিল ৫টি।
এর আগে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন টাইগার দলপতি মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা। ইনিংসের ২৩তম ওভারে মিরাজ ফিরিয়ে দেন ওপেনার শাই হোপকে। বাউন্ডারি সীমানায় দারুণ ক্যাচ নেন মোসাদ্দেক হোসেন। তার আগে ক্যারিবীয়ান ওপেনার ৬৪ বলে ৬টি চার আর তিনটি ছক্কায় করেন ৭৪ রান। দলীয় ১৪৪ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারায় উইন্ডিজরা। আরেক ওপেনার সুনীল অ্যামব্রিস ৭৮ বলে সাতটি চারে ৬৯ রান করে অপরাজিত থাকেন। তিন নম্বরে নামা ড্যারেন ব্রাভো ৩ রানে অপরাজিত থাকেন।
শুক্রবার (১৭ মে) বাংলাদেশ সময় বিকাল পৌনে চারটায় শুরু হয় ম্যাচটি। ইনজুরির কারণে এই ফাইনালে নেই সাকিব আল হাসান। এছাড়া, আগের ম্যাচে থাকলেও এই ম্যাচে নেই আবু জায়েদ রাহি, রুবেল হোসেন, লিটন দাস। দলে ফিরেছেন মেহেদি হাসান মিরাজ, মোস্তাফিজুর রহমান, সৌম্য সরকার, মোহাম্মদ মিঠুন।
ত্রিদেশীয় সিরিজে নামার আগে নিজেদের প্রস্তুতি ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের উলভস দলের বিপক্ষে হেরেছিল বাংলাদেশ। এরপর মূল আসরে নেমেই বাজিমাত। নিজেদের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শুরুটা দারুণ করেছিল মাশরাফির দল। ক্যারিবীয়ানদের ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়ে দেয় টাইগাররা। নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচটিতে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল আইরিশরা। বৃষ্টি আর খারাপ আবহাওয়ার কারণে ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়। আর নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে আবারো ক্যারিবীয়ানদের সহজেই হারিয়ে দেয় টাইগাররা। সেই ম্যাচে বাংলাদেশ ৫ উইকেটের জয় পায়।
নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে আরেকবার ক্যারিবীয়ানদের হারালে টাইগারদের পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় সর্বোচ্চ ১০। পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষে থেকে ফাইনালে উঠে বাংলাদেশ। দুইয়ে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজও ফাইনাল নিশ্চিত করে। নিয়মরক্ষার ম্যাচে আয়ারল্যান্ডকে হারিয়ে ৪ ম্যাচে তিন জয় আর একটি ম্যাচের পয়েন্ট ভাগাভাগিতে টাইগারদের মোট পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ১৪। ফাইনালে সেই উইন্ডিজদের হারিয়েই টাইগাররা প্রথম কোনো ফাইনালের শিরোপা জিতলো।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশ: শাই হোপ, সুনীল অ্যামব্রিস, ড্যারেন ব্রাভো, রোস্টন চেজ, জোনাথন কার্টার, জেসন হোল্ডার, ফ্যাবিয়ান অ্যালেন, অ্যাশলে নার্শ, কেমার কোচ, রেমন রেইফার, শ্যানন গ্যাব্রিয়েল।
বাংলাদেশ একাদশ: তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোহাম্মদ মিঠুন, মোসাদ্দেক হোসেন, সাব্বির রহমান, সাইফউদ্দিন, মেহেদি হাসান মিরাজ, মাশরাফি এবং মোস্তাফিজুর রহমান।