বিশেষ প্রতিবেদনঃ সংস্কারের অভাব ও অযত্ন আর অবহেলায় নষ্ট হতে বসেছে বাংলাদেশের অন্যতম প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন প্রায় ৪ শত বছর পুরোনো ইসলামী স্থাপত্যে ঐতিহাসিক আতিয়া জামে মসজিদ। বর্তমানে মসজিদটির তিনটি দেওয়ালের একটি দেওয়ালের মাটির কারুকাজ করা মৌটিফ গুলোতে লোনা ধরে গেছে। শেওলা জমে নষ্ট হতে বসেছে এই সব কারুকাজ।বৃষ্টি হলে মসজিদে চুয়িয়ে চুয়িয়ে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করে। এ ছাড়া মসজিদের মুসুল্লিদের ওজুর জন্য সামনে একটি পুকুর খনন করা হয়েছিল। আগে পুকুরটিতে বিভিন্ন ধরনের কচ্ছপ দেখা যেত। বর্তমানে মসজিদের এই পুকুরটিতে গৃহস্থালীর কাজ সহ কাপড় কাঁচা, গণহারে এলাকায় লোকজন গোছল করা কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে কচ্ছপ গুলো এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিভিন্ন ধর্মের মতাদর্শের অনেকেই এখানে আসেন নিজের মনের বাসনা পূরনের জন্য মানত করতে। মজার বিষয় হচ্ছে, রোগমুক্তির জন্য মসজিদের দেয়ালের পোড়ামাটি নিজের গায়ে মাখা ও সেগুলো খাওয়ার গল্পটি শোনা যায় অনেক দর্শনার্থীর মুখে। আর তাদের এসব কার্যকলাপে মসজিদটির সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এই সব সংবাদ প্রকাশিত হবার পরও সংশিষ্ট বিভাগ কোন ধরনের সংস্কারের উদ্যেগ গ্রহন করেনি।
চুন সুরকির দ্বারা নির্মিত ৪ কোণে ৪টি অষ্টকোণাকৃতির মিনার বিশিষ্ট এই মসজিদটি সুলতানি ও মোগল স্থাপত্য রীতির সুস্পষ্ট নিদর্শন। মসজিদটি আকারে বেশ ছোট, তবে এর মনোমুগ্ধকর কারুকার্য হার মানায় তার আয়তনকে। ৫টি প্রবেশদ্বার সম্বলিত মসজিদটির সামনের অংশে পোড়ামাটির বিভিন্ন নকশা আঁকা ৩টি দেওয়াল রয়েছে। মসজিদটির কার্নিশে শিল্পকর্মের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে তৎকালীণ বাংলার বেশকিছু রূপ। এছাড়া পোড়ামাটির তৈরি অসংখ্য ফুলের নকশা থাকার কারণে আতিয়া মসজিদটি বেশ দৃষ্টিনন্দন। ষোড়শ শতাব্দিতে নির্মিত এই মসজিদটি বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের পুরাতত্ত্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। ১৯৯৬-১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকার মুদ্রিত ১০ টাকার নোটে স্থান পায় ঐতিহাসিক এই মসজিদের ছবি।
এক জন দর্শনাথীর্, ঢাকা উত্তরার জসিম উদ্দীন রোড় এর বাসিন্দা আবির আহমেদ বলেন, আমি বেশ ক’বার এসেছি মসজিদটি দেখতে। বর্তমানে সংস্কারের অভাবে জীর্ণ অবস্থা আতিয়া মসজিদের । দ্রুত এর সংস্কার করা প্রযোজন।
স্থানীয় আতিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়্যারম্যান প্রকৌশলী সিরাজ মল্লিক বলেন, যত দ্রুত সম্ভব এই মসজিদের সংস্কারের প্রয়োজন। কতৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ রাখছি।বরাদ্দ পেলেই সংস্কার করা হবে । সরকারের কাছে আমাদের জোর দাবী আতিয়া মসজিদের ছবি সহ ১০ টাকার নোটটি পুরনায় চালু করা হোক।
এই ঐতিহাসিক মসজিদটি সংস্কার প্রসঙ্গে দেলদুয়ার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক মারুফ বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত জন গুরুত্বপূর্ন। এই মসজিদ রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সবার। যত দ্রুত সম্ভব সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে সংস্কারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আশা করি, মসজিদটি ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনা করে কতৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করবে।
প্রতিবেদকঃ আরমান কবীর সৈকত