মোঃমশিউর রহমান/টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ
বেশিদিন আগের কথা নয়, আবহমান বাংলার প্রতিটি গ্রামের প্রায় সব বাড়িতেই নজরে পড়ত মাটির ঘর বা মাটির দালান। টাঙ্গাইলের পাহাড় অঞ্চলে কৃষি আবাদ ও গ্রামের প্রায় বাড়ীতেই একজন করে লোক প্রবাসে থাকার কারণে গ্রামের আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনে চিরচেনা সেই মাটির তৈরি ঘর আজ বিলুপ্তির পথে।
মাটির ঘরে ঝড়-বৃষ্টি থেকে বাঁচার পাশাপাশি এ ঘরে গরম এবং শীতকালে নাতিশীতোষ্ণ তাপমাত্রা বিরাজ করে তাই এ ঘরকে গরীবের এসি (শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত) ঘরও বলত গ্রামের মানুষ। গ্রামের আর্থ-সামাজিক অবস্থা পরিবর্তনের ফলে এখন টিন ও ইট-পাথরের দালান তৈরি হচ্ছে। কিছু দরিদ্র পরিবার এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে বাড়িতে টিনের ঘর তৈরি করেছেন।
টাঙ্গাইল জেলা ঘাটাইল উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়ন,ধলাপড়া, সাগরদিঘী, লক্ষিন্দর, রসুলপুর সখীপুর উপজেলার প্রতিমাবংকী, গজারিয়া, কালমেঘা, যাদবপুর, কালিয়া, কাকড়াজান, বহেড়াতৈল, কাকড়াজান, বহুরিয়া, দাড়িয়াপুর, হাতিবান্ধা ও সিলিমপুর গ্রামের আনাচে-কানাচে কোথাও আর ঐতিহ্যবাহী কোঠা ঘর চোখে পড়েনি। অথচ এইতো কয়েক বছর আগেও মাটির দেয়ালের উপর টিন-খড়ের চালার ঘরই ছিল আভিজাত্যের প্রতীক।
ঘাটাইল উপজেলা দেওপাড়া ইউনিয়ন দেওপাড়া গ্রামের মান্নান সিকাদারের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, কয়েক বছর আগে আমাদের একটি মাটির ঘর ছিলো। লালমাটিকে ভালো ভাবে গুরা করে ছোট ছোট করে পাটের আঁশ কেটে দিয়েছিলাম, যাতে মাটি দীর্ঘদিন স্থায়ীভাবে আকড়ে ধরে রাখতে পারে। ঘরের চারদিকে এক স্তরে ২ ফুট বাইট মাটি দিয়ে দুই থেকে তিনদিন রোদে শুকিয়ে আবার গাঁথুনি শুরু করতাম। এভাবে একটি ঘর তৈরি করতে প্রায় এক মাস সময় লেগে যেত। উপরে ছাউনি দিয়েছিলাম টিন দিয়ে। অবশ্য অনেকেই ছন দিয়ে এ চাল তৈরি করত। ঘরের ভেতরে ও বাইরে আকর্ষণীয় করার জন্যে গ্রামীন আলপনায় গৃহবধূরা কাঁদা-পানি দিয়ে প্রলেপ দিতেন। অনেকেই আবার তাতে রং বা চুন দিয়ে বর্তমানের ইটের দালানের মত চকচকে করে তুলতেন। দূর থেকে দেখে মনে হতো এটি একটি পাকা বাড়ি।
সাগরদিঘী পাহাড়ের জোরদিঘী গ্রামের আব্দুল জব্বার (৯০) বলেন, আমাদের মাটির ঘর এখনোও আছে তবে ভাঙ্গা ৩৫ বছর আগে দিয়ে ছিলাম। এখন ছেলে বড় হয়েছে বিভিন্ন ব্যবসার পাশাপাশি কৃষি কাজ করে। আর্থিক অবস্থা ভাল হওয়ায় টিনের ঘর দিয়েছি। এখন মাটির ঘরটা অকেজো হয়ে পড়ে আছে। এখন আমাদের পাহাড়ি মাটির ঘর নাই বললেই চলে।