স্টাফ রিপোর্টার : টাঙ্গাইলে স্ত্রীকে তালাক দিতে বাধ্য করাসহ ইয়াবা দিয়ে তিন সন্তানের জনক এক ব্যবসায়ি যুবককে ফাঁসাতে মাড়িয়া হয়ে উঠেছেন আসাদা নামের এক ইউপি মেম্বার বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে ইউপি চেয়ারম্যানের মদদও রয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীসহ স্থানীয়রা। ইউপি চেয়ারম্যান, বর্তমান ও সাবেক ইউপি সদস্য এবং এক মাতাব্বরের যোগসাজসে ২২দিন কারাভোগ করাসহ মোট পাঁচটি মিথ্যা মামলার আসামী হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন নির্যাতিত আব্দুল্লাহ।
স্ত্রীকে ধর্ষণ, হত্যার চেষ্টা ও লুটপাটের অভিযোগ এনে সম্প্রতি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে থানা ও আদালতে চারটি মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী। নির্যাতনের তথ্য ও সত্যতা অনুসন্ধানে সংবাদকর্মীদের বক্তব্য দেয়ায় এক যুবককে মামলার আসামী করাসহ এক বেকারী মালিকের মালামাল বিক্রি বন্ধ করে দেন অভিযুক্তরা।
লোমহর্ষক ও রহস্যময় এ ঘটনাটি ঘটেছে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার মাহমুদনগর ইউনিয়নের মাকোরকোল হাসনাবাদ (কুকুরিয়া) গ্রামে। তিনসন্তানের জনক ভুক্তভোগী আব্দুল্লাহ ওই গ্রামের হাজী আবু সাইদের ছেলে। এছাড়া অভিযুক্ত ইউপি মেম্বার আসাদ ওই ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড সদস্য ও মো. ইমান হোসেন ডাক্তার এর ছেলে।
ষড়যন্ত্র আর প্রতিহিংসা থেকে বাঁচতে সুষ্ঠু তদন্ত আর অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন আব্দুল্লাহ। ভুক্তভোগীর পরিবার ও স্থানীয়রা জানায়, আব্দুল্লাহ দীর্ঘদিন যাবৎ সাবান ও কাপড় ধোয়ার পাউডারের ব্যবসা করে আসছেন। ২০১২ সালে একই গ্রামে মমতাজ আক্তারকে বিয়ে করে ঘর সংসার শুরু করেন তিনি। বর্তমানে ওই দম্পতির ঘরে তিনটি ছেলে সন্তান রয়েছে।
জানা যায়, গত বছরের ১৫ মে ইউপি মেম্বার আসাদ ও ওয়ারেস আব্দুল্লাহর কাছে এক লাখ টাকা দাবী করে। দাবীকৃত টাকা না দেয়ায় আসামীরা এলাকায় কোন প্রকার ব্যবসা করতে দিবে না বলে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখায়। এর আগে ব্যবসার কারণে অভিযুক্ত বর্তমান ইউপি সদস্যের শশুর বাড়ি ঢাকার আশুলিয়ার ভাদাইল উত্তরপাড়াস্থ বাসা ভাড়া থাকা অবস্থায় আব্দুল্লাহর বাড়ী থেকে প্রতারণামূলকভাবে সাবান আটকে রাখাসহ গ্যারেজ ভাড়া, বাড়ী ভাড়া ও এডভান্স বাবদ ১ লাখ ২৫ হাজার টাকাসহ মোট ৫ লাখ হাতিয়ে নেনা হয়।
এছাড়াও ব্যবহৃত খাট, সেলাই মেশিন,ওয়ারড্রপ, রেক, গ্যাসের চুলা, সিসি টিভিসহ আসবাবপত্র আটক রাখা হয়। এ অভিযোগে গত বছরের ৩১ মে টাঙ্গাইল সদর থানায় বাদি হয়ে তিনজনের নাম উল্লেখ করে একটি অভিযোগ দায়ের করেন আব্দুল্লাহ। চলতি বছরের ৯ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইলের বিজ্ঞ সদর থানা আমলী আদালতে ইউপি চেয়ারম্যান, ৯ নং ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্যসহ ৬জনসহ ১০ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইলের বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইবুনাল আদালতে ইউপি চেয়ারম্যান, ৯ নং ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্যসহ ৭ জনকে আসামী করে গণধর্ষণ মোকদ্দমার আবেদন করেছেন।
এছাড়া চলতি বছরের ১২ সেপ্টেম্বর ৯ নং ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্যসহ দুইজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতজনকে আসামী করে টাঙ্গাইল সদর থানায় হত্যার চেষ্টার অভিযোগ দিয়েছেন।
স্থানীয় হাবিব বলেন,আব্দুল্লাহ্ আমার বন্ধু। বিষয়টি জানেন আসাদ মেম্বার। এ সুযোগ নিয়ে আসাদ মেম্বার আমার কাছে বেশ কয়েকটি ইয়াবা দেন এবং ইয়াবা দিয়ে আব্দুল্লাহকে ফাঁসাতে বলেন। আমি আপত্তি করি এবং ফাঁসানোর বিষয়টি আব্দুল্লাহকে জানিয়ে দিয়ে সতর্ক থাকতে বলি। ইয়াবা দিয়ে আব্দুল্লাহকে ফাঁসাতে আসাদ মেম্বার আমাকে দিয়ে চেষ্টা করেছিল এই বক্তব্য সংবাদকর্মীদের দেয়ায় গত ১৯ সেপ্টেম্বর মেম্বারের সহযোগি কালাম বাদী হয়ে মারধরের একটি মামলায় আমাকে ৮ নং আসামী করেছে। ওই মারধরের ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছুই জানিনা।
শামীম নামে এক ব্যক্তি বলেন, গত ১০ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১০টার দিকে দেখি আব্দুল্লাহ দৌঁড়ে পালাচ্ছে। এর কিছুক্ষণ পরেই দেখি আসাদ মেম্বারসহ তিনজন লোক মোটরসাইকেল নিয়ে পিছন দিক থেকে আসছে। অন্ধকার থাকায় অন্য দুইজনকে আমি চিনতে পারি নাই। এ সময় তাদের হাতে কোন অস্ত্র ছিল কিনা সেটিও আমি দেখতে পারি নাই। পরে এসে আব্দুল্লাহর মুখ থেকে শুনতে পারি তাকে মারার জন্য আসাদ মেম্বারসহ দুইজন অস্ত্র নিয়ে আসছিল।
ভুক্তভোগীর বাবা হাজী আবু সাইদ বলেন, ১৯ এপ্রিল বাদ জুম্মা পরিষদের চারজন চৌকীদার আমাদের বাড়ীতে আসছে। কি কারণে আসছো জানতে চাইলে তারা বলেন আব্দুল্লাহ শশুরবাড়িতে ঝামেলা করেছে, বিষয়টি মিমাংসার জন্য চেয়ারম্যান আব্দুল্লাকে নিয়ে যেতে বলছেন। আমরা যাওয়ার সাথে সাথে এসআই আবুল বাশার আব্দুল্লাহ হাতে হ্যান্ডক্যাপ লাগিয়ে দেন। এ সময় আমি আব্দুল্লাহর নামে কোন মামলা নেই, এরপরও কেন তাকে হ্যান্ডক্যাপ দিলেন জানতে চাওয়ায় আমার উপর রাগে আব্দুল্লাহকে বেধম মারধর করেন ওই এসআই। এরপর মামলা ছাড়াই তাকে থানায় আটক করেন বলে অভিযোগ আব্দুল্লার বাবা আবু সাঈদের।
ভুক্তভোগী আব্দুল্লাহ বলেন, চেয়ারম্যানে আশ্রয় আর মদদে মেম্বার আসাদ আমাকে এভাবে হয়রানী করছে। চলতি বছরের ১৯ এপ্রিল বাদ জুম্মা তারা শশুরবাড়ীতে ঝামেলা করেছি এবং সেটি মিমাংসার নাম করে আমাকে পরিষদে ডেকে নিয়ে পুলিশ দিয়ে নির্যাতন চালিয়ে মামলা ছাড়াই গ্রেফতার করিয়েছেন। পরেরদিন শাশুড়িকে জিম্মি করে আমার বিরুদ্ধে শশুরকে মেরেছি এই মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠায়। ওই মামলায় আমি ২২দিন কারাভোগ করেছি। এখনও তারা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের ষড়যন্ত্রে আমার বউ এর কোন হদিস পাচ্ছিনা। শশুরবাড়ির লোকজন তাদের প্ররোচনায় বউকে আমার কাছে আসতে দিচ্ছেননা। যার ফলে আমি সন্তানদের নিয়ে ভীষণ কষ্টে আছি।
তিনি বলেন, আমি একজন ব্যবসায়ি। কাপড় কাচার পাউডারের ব্যবসা করি। তারা আমার বিরুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসায়ি ও মাদকাসক্ত বলে প্রচার করে সমাজে আমার ও পরিবারের মান নষ্ট করছে। মাদকসহ একবারও পুলিশ বা গ্রামবাসির কাছে আটক না হলেও তারা ষড়যন্ত্র করে আমার নামে থানা, র্যাব ও ইউএনওর কাছে অভিযোগ দিয়েছে। তবে ষড়যন্ত্রকারী আসাদ মেম্বার ও তার ছোট বউ এলাকায় ইয়াবা খোর হিসেবে পরিচিত।
সে আরও বলেন, সম্প্রতি তারা আমার বাড়ি ঘেরাও দিয়ে আমাকে মারধর করাসহ এলাকা ছাড়া করার পরিকল্পনা করেছেন বলে জানিয়েছেন ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য মংলা মেম্বার। তারা আমাকে হত্যার পরিকল্পনাও করছেন। আমি নিরাপত্তাসহ দোষীদের কঠোর শাস্তি জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
মামলা দিয়ে হয়রানীর বিষয়টি অস্বীকার করে ইউপি সদস্য আসাদ বলেন, আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছে আব্দুল্লাহ। সে এলাকার একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ি। তার বিরুদ্ধে থানা, র্যাব, ইউএনও অফিসে অভিযোগ আছে। অন্য এক মাদকসেবী নারী ছবি ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে, সেটি আমার বউ বলে প্রচার করছে আব্দুল্লাহ এবং সকল মহলে বলে বেড়াচ্ছে আমি নাকি মাদক সেবী।
ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবর রহমান বলেন, আসাদ মেম্বারের বিরুদ্ধে নীরিহ মানুষকে হয়রানী করার অসংখ্য অভিযোগ আছে। এছাড়া ওই মেম্বার ও তার বউ মাদকসেবী বলে এলাকায় প্রচার রয়েছে।
আগেরদিন আটক করে পরেরদিন মামলা নেয়ার প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে সদ্যবদলী হওয়া টাঙ্গাইল সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবুল বাশার বলেন, শশুরকে মারধরের ঘটনায় আব্দুল্লাহকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তবে আসাদ মেম্বার ভালো না বলে জানায় তিনি।
এ বিষয়ে মাহমুদনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আসলাম হোসেন জানান, আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার অভিযোগ আছে। তবে মাদকসহ তিনি, গ্রামবাসি বা পুলিশের কাছে কখনও আটক হয়নি । শশুরের মামলায় আব্দুল্লাহকে পুলিশ পরিষদ থেকে আটক করে বলে জানান তিনি।