নিউজ ডেস্কঃ সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনির বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলেছে, তিনি কৃষককে একা ধান কাটতে দেখে সেদিন এগিয়ে গিয়েছিলেন। তাকে উৎসাহ দিতে কিছু ধান কেটে দেন। তার সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীরাও কিছু ধান কাটেন। এ নিয়ে একটি মহল অপপ্রচার করছেন তারা খুব নিম্নরুচির পরিচয় দিচ্ছেন।
উল্লেখ্য, গত সোমবার (২৭ এপ্রিল) সংসদ সদস্য ছোট মনির এবং তার কয়েকজন সমর্থক গোপালপুর পৌরসভার সুন্দর এলাকার এক কৃষকের জমির ধান কেটে দেন। এরপর তারা ধান কাটার ওই ছবি ও ভিডিও তাদের ফেসবুক পেইজে পোস্ট করেন। ছবিতে দেখা যায়, ধান গাছ ছিল সবুজ। এ নিয়ে ছোট মনিরের বিরোধী পক্ষ সমালোচনা করে ফেসবুকে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেন। তাদের দাবি সংসদ সদস্য কাঁচা ধান কেটে ফটোসেশন করে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন।
সরেজমিনে জানা যায়, যার জমির ধান ওইদিন কাটা হয়েছে সেই বর্গা চাষীর নাম আব্দুল লতিফ(৬০), তার বাবার নাম মৃত জহির আলী। আব্দুল লতিফ ১২ শতাংশের ওই জমি নন্দনপুর এলাকার সোহরাব আলীর কাছ থেকে বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করেন। বুধবার(২৯ এপ্রিল) দুপুর পর্যন্ত জমি,র ৯০ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে।
আব্দুল লতিফ জানান, বৈরাণ নদীর তলদেশের ১২ শতাংশ জমিতে তিনি ব্রি-২৮ জাতের বোরো ধান লাগিয়েছেন। আগাম জাতের হওয়ায় শীষের ৮০ ভাগ ধান পেকে গেছে। প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে। নদীর তলদেশে পানি জমছে। ভারী বর্ষণ হলে জমির ধান ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড বৈরাণ নদীর খনন কাজ করছে। তার ধানী জমি থেকে পাঁচশ গজ দুরে এ খনন এসে ঠেকেছে। তাই ক্ষেতের পাকা ধান কাটা খুব জরুরি। কিন্তু করোনার কারণে শ্রমিক না পাওয়ায় নিজেই ক্ষেতের ধান কাটছিলেন। দুপুর ১২টার দিকে সংসদ সদস্য ছোট মনির দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নদীর পাড় ধরে যাওয়ার সময় তাকে একা ধান কাটতে দেখে কাছে আসেন। পরে তিনি নিজ থেকেই কয়েক গোছা ধান খাটেন। এরপর সংসদ সদস্যের সঙ্গে থাকা কয়েক নেতাকর্মী ১০-১২ আঁটি ধান কাটেন।
সুন্দর গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে কৃষক নজরুল ইসলাম(৫০), মৃত দুলাল মিয়ার ছেলে কৃষক মো. জলিল মিয়া(৪০), মোবারক মিয়ার ছেলে কৃষক আব্দুল জলিল(৪৬) সহ অনেকেই জানান, জমিটি বৈরাণ নদীর তলদেশে হওয়ায় প্রায় বছরই কাঁচা ধান বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায়। কৃষক আব্দুল লতিফ এবার আগাম জাতের ব্রি-২৮ রোপণ করেন। ওইদিন তিনি একাই ধান কাটছিলেন। এমন সময় সংসদ সদস্য ছোট মনির নেতাকর্মীদের সাথে নদীতীর দিয়ে যাচ্ছিলেন। একা ধান কাটতে দেখে সংসদ সদস্য ওই কৃষকের কাছে যান এবং কৃষকের কুশলাদী জানতে চান। এক পর্যায়ে তিনি ওই কৃষকের জমির কয়েক গাছি ধান কাটেন। এ সময় তার সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীরাও ১০-১২আঁটি ধান কাটেন।
জমির মালিক সোহরাব আলীর ছেলে একরামুল হক জানান, ওই জমিটি আব্দুল লতিফ তাদের কাছ থেকে বর্গা নিয়ে চাষ করেন। প্রায় বছরই বৃষ্টির পানিতে ধান তলিয়ে যায়। তিনি জানান, ব্রি ধান-২৮ বোরো মৌসুমের আগাম জাতের ধান। এর বৈশিষ্টই হচ্ছে- ধান পাকলেও পাতা বেশ কিছুদিন সবুজ রঙ ধরে রাখে। এমপি মহোদয় ধান কাটার সময় দূর থেকে ভিডিও ধারণ করায় সবুজপাতার সমাহার উপজীব্য হয়ে দেখা দিয়েছে। কিন্তু প্রকৃতার্থে এ ক্ষেতের ধান পাকা। ফলে সাধারণভাবেই বলা যায়, এমপি মহোদয় পাকা ধান কেটেছেন কাঁচা নয়। যাঁরা কাঁচা ধান বলে প্রচার-প্রোপাগা-া চালাচ্ছেন তারা এমপি সাহেবের প্রতিপক্ষ।
গোপালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক সাইফুল ইসলাম তালুকদার সুরুজ জানান, সংসদ সদস্য ওইদিন সুন্দর পূর্বপাড়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা মাঠে ত্রাণ সামগ্রী দিয়ে গোপালপুর উপজেলা অফিসের দিকে যাওয়ার পথে পৌর এলাকার সুন্দর গ্রামে এক কৃষককে ধান কাটতে দেখেন। তিনি কৌতূহলবশত ওই কৃষকের কাছে যান এবং কুশলাদি বিনিময় শেষে কয়েক গোছা পাকা ধান কাটেন। সেটিকে কেউ কেউ অপপ্রচার চালিয়ে নিচু মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন।
গোপালপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ জানান, এবার এ উপজেলায় ১৩ হাজার ৭০০ হেক্টরে বোরোর আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে উফসী ব্রি ধান-২৮ জাতের চার হাজার ৬০০ হেক্টর। ব্রি ধান-২৮ আগাম জাত। কৃষি বিভাগ গত ২২ এপ্রিল নমুনা শস্য কর্তন শুরু করেছে। আব্দুল লতিফের জমির ধান পেকে গেলেও পাতা এখনো সবুজ। উফসী জাতের ধানের বৈশিষ্ট্য হলো ধান পেকে যাওয়ার পরও কিছুদিন পাতা সবুজ থেকে যায়।
সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনির জানান, তিনি কৃষককে একা ধান কাটতে দেখে সেদিন এগিয়ে গিয়েছিলেন। তাকে উৎসাহ দিতে কিছু ধান কেটে দেন। তার সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীরাও কিছু ধান কাটেন। এ নিয়ে একটি মহল অপপ্রচার করছেন তারা খুব নি¤œরুচির পরিচয় দিচ্ছেন।
প্রতিবেদকঃ আরমান কবীর