স্টাফ রিপোর্টার : কক্সবাজারের চকরিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে সেনাবাহিনীর লেফটেন্যাণ্ট তানজিম সরোয়ার নির্জনের জানাজা শেষে টাঙ্গাইলের বোয়ালী সামাজিক গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে। তানজিম সরোয়ার নির্জন টাঙ্গাইলের করটিয়া ইউনিয়নের করের বেতকা গ্রামের সারওয়ার জাহানের ছেলে। এরআগে মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকাল সাড়ে চার টার দিকে নিহত সেনা কর্মকর্তার মরদেহ হেলিকপ্টরযোগে টাঙ্গাইল পৌঁছায়।
এদিন বিকাল সাড়ে চার টার দিকে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারযোগে লেফটেন্যাণ্ট তানজিম সরোয়ার নির্জনের মরদেহ টাঙ্গাইলে পৌঁছলে এক হৃদয় বিদারক ঘটনার অবতারণা হয়। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তাকে শেষবার এক নজর দেখতে টাঙ্গাইল জেলা সদরের হেলিপ্যাডে ভির জমায়। পরে করটিয়া ইউনিয়নের করের বেতকায় নেওয়া হলে পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাকে বোয়ালী মাদ্রাসা মাঠে জানাজা নামাজের জন্য নেওয়া হয়।
মরহুমের জানাজা নামাজে জেলা বিএনপি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, প্রশাসনের কর্মকর্তা সহ নানা শ্রেণি-পেশার লোকজন অংশ নেয়। পরে বোয়ালী সামাজিক গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এরআগে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তার কফিন জাতীয় পতাকা দিয়ে মুড়িয়ে দেয় এবং স্বশস্ত্র গার্ড অব অনার প্রদান করে।
‘গতকাল রাতে নির্জন আমাকে কল দিয়ে বলল, আপু অক্টোবরের ১ তারিখে আমার জন্মদিন, সেদিন আমি ছুটিতে আসব। তখন আমাকে কী উপহার দিবা? আমি জানতাম যে নির্জন অনেক পশুপাখি পছন্দ করতেন তাই আমি নির্জনকে বলেছিলাম জন্মদিনে টিয়া পাখি গিফট করব। নির্জন আমার একমাত্র ভাই। আমরা দুই ভাই-বোন বাবা-মাকে নিয়ে খুবই সুখে-স্বাচ্ছ্বন্দে সংসার করছিলাম।’
মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নির্জনের বাড়িতে গেলে কথাগুলো বলছিলেন কক্সবাজারের চকরিয়ায় ডাকাত প্রতিরোধ অভিযানে গিয়ে নিহত সেনা কর্মকর্তার বোন তাসনুভা সরোয়ার সূচি।
এ সময় সূচি বলেন, ‘আমার ভাই ডিসেম্বর মাসে ক্যাপ্টেন পদে পদোন্নতি পেত। সে জন্য সে ভালোভাবে কাজ শুরু করেছিল। আমরা আগামি বছর বিয়ে করানোর জন্যও পাত্রী দেখা শুরু করেছিলাম। গতকাল সোমবার(২৩ সেপ্টেম্বর) ফোন করে আমাকে বলল, আপু আমাকে পিঠা খাওয়াবা কবে, আমি মাংস পিঠা খাব। আর পিঠা খাওয়াতে পারলাম না আমার ভাইটাকে। আমার ভাই বলল, আপু আমি একটি অভিযানে যাচ্ছি- দোয়া করো। অভিযান শেষ করে আমি নিরাপদ জায়গায় গিয়ে কল দিব চিন্তা করো না- আর আমার ভাই কল দিল না।’
নির্জনের মা নাজমা আক্তার খান ছেলে হারানোর শোকে ম্যূহমান। ছেলের নানা স্মৃতি হাতড়ে তিনি বার বার মূর্ছা যাচ্চিলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে রাতে কল দিয়ে বলল, মা আমি অভিযানে যাচ্ছি দোয়া করো। শেষ করে তারপর কল দিব, আমার ছেলে আর কল দিল না।’
নির্জনের বাবা সারোয়ার জাহান বলেন, ‘সকালে কল আসে নির্জন মারা গেছে। আমি বিশ্বাস করতেই পারছিলাম না কী থেকে কী হয়ে গেল। দেশের জন্য আমার ছেলে জীবন দিয়েছে। আমি আমার ছেলের হত্যাকারীদের বিচার দাবি করছি। আমার সংসারে একমাত্র উপার্জনের মানুষ ছিল আমার ছেলে। সেও এখন হারিয়ে গেল।’
মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) ভোরে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়া গ্রামে ডাকাতি প্রতিরোধে যৌথবাহিনী অভিযান চালায়। ওই অভিযানে গিয়ে সেনাবাহিনীর লেফটেন্যাণ্ট তানজিম সারোয়ার নির্জন নিহত হন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, তানজিম সারোয়ার নির্জন পাবনা ক্যাডেট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ৮২তম দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের সঙ্গে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি থেকে ২০২২ সালের ৮ জুন আর্মি সার্ভিস কোরে (এএসসি) কমিশন লাভ করেন।