মোঃ মশিউর রহমান/টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইল পুলিশ লাইনস আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীর মেধাবী ছাত্রী নৈঋতা হালদার এবার স্কাউট প্রতিযোগিতার সর্বোচ্চ পদক প্রেসিডেন্ট’স স্কাউট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি মাত্র ১০ বছরের শিক্ষা জীবনে নৈঋতা অর্জন করেছে ১১টি জাতীয় পুরষ্কার। টাঙ্গাইল জেলা শহরে থেকে এটি একটি বিরল ঘটনা। সারাদেশে টাঙ্গাইলের মুখ উজ্জ্বল করায় তাকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন জেলাবাসী। জানা যায়, নৈঋতা হালদার চতুর্থ শ্রেণীতে পড়াকালীন বিগত ২০১৪ সালে অভিনয়ে শ্রেষ্ঠ, অষ্টম শ্রেণীতে ২০১৮ সালে শ্রেষ্ঠ এবং নবম শ্রেণীতে ২০১৯ সালে ২য় স্থান অধিকার করে। বিগত ২০১৫ সালে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়াকালীন উপস্থিত বক্তৃতা এবং কবিতা আবৃতিতে ২য় হয়। বিগত ২০১৯ সালে নবম শ্রেণীতে পড়াকালীন লোকনৃত্যে ৩য় ও দশম শ্রেণীতে ২০২০ সালে স্কাউটের প্রতিভা আয়োজনে উচ্চাঙ্গ নৃত্যে ১ম হয়েছে। স্কাউটিং এ ২০১৫ সালে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়াকালীন শাপলা কাব, অষ্টম শ্রেণীতে ২০১৮ সালে সমাজ উন্নয়ন এবং দশম শ্রেণীতে প্রেসিডেন্ট’স অ্যাওয়ার্ড-২০১৯ পেয়েছে। নবম শ্রেনীতে পড়াকালীন ২০১৯ সালে দেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থীর মুকুট অর্জন করে। বিষ্ময়কর বিষয় ২০১৯ সালে একবর্ষে জাতীয়ভাবে ৩টি পদে পুরষ্কার পাওয়া দেশের একমাত্র শিক্ষার্থী হলো নৈঋতা হালদার। ফ্রান্সের প্যারিসে আন্তর্জাতিক ডিজিটাল আর্ট প্রতিযোগিতায় তার আর্ট মনোনিত হয়েছে। বাবা অরিন্দম হালদার ও মাতা চিনু রানী বিশ্বাসের একমাত্র মেয়ে নৈঋতার জন্ম ২০০৫ সালের ৪ মে মির্জাপুরের বহনতলী গ্রামে মামার বাড়িতে। পৈত্রিক নিবাস মাদারিপুরে। মা বঙ্গের আলীগড় খ্যাত সরকারি সা’দত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষিকা। মায়ের চাকরির সুবাদে নৈঋতার বেড়ে ওঠা টাঙ্গাইলেই। বিগত ২০১৫ সালে কুর্নি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে মির্জাপুর উপজেলায় প্রথম স্থান অর্জন করে এবং ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায়। এরপর টাঙ্গাইল পুলিশ লাইনস আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে জেএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ এবং ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিপ্রাপ্ত হয়। প্রথম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে রোল নং- এক। বিগত ২০১৯ সালের সৃজনশীল মেধা অন্বেশন প্রতিযোগিতায় ভাষা ও সাহিত্যে টাঙ্গাইল জেলায় প্রথম স্থান অধিকার করে। এছাড়া জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে পেয়েছে অসংখ্য পদক-পুরষ্কার। নৈঋতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শিক্ষামন্ত্রীর হাত থেকে ৪ বার করে পুরষ্কার গ্রহণ করেছে। সরকারি শিক্ষা সফরে বিদেশে গিয়েছে।
ধরাবাঁধা কোন নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন একবারেই অপছন্দ নৈঋতার। কিন্তু সময়ের মূল্য অক্ষরে অক্ষরে দিতে অভ্যস্ত। বিদ্যালয়ের পড়া শেষ না করে বসে পরলো ছবি আঁকতে, আবার ছবি আকাঁ শেষ না করেই মগ্ন হয়ে যায় গান-নৃত্যে। বড়ই হাসিখুশি মেয়ে। এই বয়সে বাংলা ইংরেজীর পাশাপাশি সে আয়ত্ব করেছে হিন্দি, উর্দু আর জাপানী ভাষা। বই পড়ে কিছুটা কোরিয়ান ভাষাও বলতে পারে। অবসরে কবিতা গল্প লিখতে পছন্দ করে। বিগত ২০১৯ সালে ফেব্রুয়ারিতে নৈঋতার লেখা ময়না আমার বাবুই সোনা নামের একটি গল্পের বই প্রকাশিত হয়েছে। টাঙ্গাইলের জেলা শিল্পকলা একাডেমী, সিডিসি ক্লাব এবং জেলা শিশু নাট্য দলের তত্ত্বাবধায়নে নিয়মিত গান, নাচ ও অভিনয় চর্চা করে থাকে। পুলিশ লাইনস আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আব্দুল কাদের বলেন, নৈঋতার মতো অল সাইডে এতো মেধাবী শিক্ষার্থী আমাদের স্কুলে কখনও আসেনি। আমার জানামতে এতোগুলো ইভেন্টে জাতীয় পুরষ্কার পাওয়া দেশের একমাত্র শিক্ষার্থী ওই ছাত্রী। বাংলাদেশ স্কাউট টাঙ্গাইল জেলার কমিশনার ওয়াজেদ আলী খানশুর (লিডার ট্রেইনার) বলেন, নৈঋতা শব্দের অর্থ মহীয়সী নারী। মেধার সাথে অক্লান্ত পরিশ্রম এবং রত্নগর্ভা মায়ের প্রচেষ্টায় সেই পথেই এগিয়ে যাচ্ছে মেয়েটি। ওর সাফল্যে স্কাউটসহ আমরা জেলাবাসী অত্যন্ত খুশি।
নৈঋতার গর্বিত মা চিনু রানী বিশ্বাস আবেগময় কন্ঠে বলেন, ও যেনো মানুষের মতো মানুষ হয়ে দেশ জাতির সেবা করতে পারে সেই কামনা করি। সবার কাছে আশির্বাদ চাই। টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার ও পুলিশ লাইনস আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি সঞ্জিত কুমার রায় বলেন, নৈঋতা দেশের সম্পদ। ওর প্রতিভা বিকাশের সুযোগ ও পরিবেশ আমাদের তৈরি করে দিতে হবে। ও বড় হলে দেশের জন্যে মেধাকে কাজে লাগাতে পারবে। টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মোঃ আতাউল গণি বলেন, দেশের অনেক নামিদামি প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ছাত্রীদের পেছনে ফেলে টাঙ্গাইলের মেয়ের এ অর্জন অত্যন্ত গৌরবের বিষয়। পুরো টাঙ্গাইলবাসীর মুখ উজ্জ্বল করেছে। এতে অন্য ছাত্র ছাত্রীরা অনুপ্রাণিত হবে। আমরা নৈঋতা হালদারকে আরো উৎসাহ দিবো। আমার বিশ্বাস মেধা ও কর্ম দ্বারা একদিন দেশের সীমানা ছাড়িয়ে নৈঋতার সুনাম সারা বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত হবে। কৃতি ছাত্রী নৈঋতা হালদার বলেন, এই প্রাপ্তিতে আমি খুবই খুশি। আর সকল কৃতিত্ব আমার মায়ের। যিনি আমাকে বন্ধুর মতো সব কিছুতেই আগলে রাখেন। নিজের স্বপ্ন নিয়ে নৈঋতা দৃঢ় কন্ঠে বলে আমি বড় হয়ে পররাষ্ট্র সচিব হতে চাই। কারণ আমার প্রিয় বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। বিশ্বের সাথে আমাদের কুটনৈতিক সম্পর্ক যত শক্তিশালী এবং পারস্পারিক বিনিময় তরান্বিত হবে এদেশ ততই উন্নত হবে। আমি সেই কাজে অংশ নিতে চাই। বড় হয়ে আমি অসহায় মানুষের জন্যে কাজ করবো। অন্য ছাত্রছাত্রীদের উদেশ্যে নৈঋতা বলে আমি কখনও সময় অপচয় করি না। প্রকৃতিকে ভালোবাসি প্রকৃতিকে নিয়ে লিখি। এতে মন উদার হয়।